সরকার ‘বিব্রত’ হয়, এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি চাইছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া সংগঠনের এক চিঠিতে এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, জামিন-পরবর্তী তাঁরা এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে না, যাতে রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’
হেফাজতের একটি প্রতিনিধিদল এদিন বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করেন। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান দলটির নেতৃত্ব দেন। ওই দলে মোট ছয় সদস্য ছিলেন। বাকি সদস্যরা হলেন: সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ও ফোরকান উল্লাহ খলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস, ঢাকা মহানগর সভাপতি আবদুল কাইয়ুম সোবহানী, সাধারণ সম্পাদক কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাজিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা কারাবন্দী আলেমদের মুক্তিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, এক বছরের বেশি সময় আলেম-ওলামারা বন্দী থাকার কারণে তাঁদের পরিবার এবং নিয়ন্ত্রণাধীন মসজিদ-মাদ্রাসা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্দী আলেমদের অনেকে মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগছেন। কাউকে কাউকে হুইলচেয়ারে করে আদালতে হাজির করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ২০১৩ ও ২০১৬ সালে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তা প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং গত বছর যেসব আলেমদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁদের প্রায় সবাইকে ২০১৩, ২০১৬ সালের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। উপরন্তু ২০২১ সালের কোনো কোনো মামলার অভিযোগপত্রও তৈরি হয়ে গেছে। বৈঠকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান হেফাজতের নেতারা।
গত বছর মার্চের শেষ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতাকে ঘিরে দেশজুড়ে পুলিশের সঙ্গে হেফাজত নেতা–কর্মীদের ব্যাপক সহিংসতা হয়। এরপর ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের অনেকে এখনো কারাবন্দী আছেন।
এসব নেতা-কর্মীর অনেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাতে সহায়তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হেফাজতের নেতারা। চিঠির শুরুতেই এর উল্লেখ করে বলা হয়, ‘মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আপনার অনুগ্রহে ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে আলেম-ওলামা ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের অনেকেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ জন্য আমরা আপনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাজিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, আমার কাছে যদি জামিনের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু কারাবন্দীদের জামিনের বিষয়ে সরকারের অন্যান্য সংস্থাও জড়িত। তাদের সঙ্গে কথা বলে কারাবন্দী নেতা–কর্মীদের মুক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ছাড়া দেশের ১১৬ জন আলেম ও ১ হাজার মাদ্রাসার নামে গণকমিশনের কথিত শ্বেতপত্র বাজেয়াপ্ত করা, শিক্ষা আইন-২০২২-এর কমিটিতে কওমি মাদ্রাসার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই নেতার মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) –কে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানোর দাবি করেছেন হেফাজত নেতারা।
গণকমিশনের কথিত শ্বেতপত্রের বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলে দেওয়ার জন্য যাতে শ্বেতপত্রের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, এই কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। শ্বেতপত্র বাজেয়াপ্ত করা হবে।
বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলামের নেতারা বেশ কিছু দাবি নিয়ে এসেছেন। আমি বলেছি, তাঁদের দাবিগুলো আমরা দেখব। আগেও তাঁদের বলেছি, দাবি পর্যালোচনা করা হবে।’