‘ইহাতো আমগো উপর সরকারের জুলুম।’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ৮, ২০২১, ০৪:৪৭ পিএম

‘ইহাতো আমগো উপর সরকারের জুলুম।’

‘ভাড়া ছিলো ৩০ টাহা, নিবো ৩৫ টাহা, নেয় ৪০ টাহা। এতো ভাড়ায় কেমনে চলমু? ইহাতো আমগো উপর সরকারের জুলুম।’ বাস ভাড়া বৃদ্ধির কারণে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন দিন মুজুর আব্দুস সালাম। প্রতিদিন রাজধানীর মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারে আসেন কিছু কাজ করার জন্য। এই টাকা রাস্তাতে শেষ হইয়া যাবে বলে জানান তিনি। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে তিনি বলেন, ‘আমরা যে টাহা পাই তাতো এহন রাস্তায় শেষ হইয়া যাইবো। বাসায় কি লইয়া যামু?’

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা, মহানগরে বড় বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও মহানগরে মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যা আজ (৮ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হচ্ছে।

তবে আব্দুস সালামের মতো কেউই সন্তুষ্ঠ নয় এই ভাড়ায়। ভাড়া বাড়ার কারণে খরচের মাত্রা দ্বিগুণ থেকে তিনগুন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী। চাকরির সুবাদে মিরপুর থেকে মতিঝিল যাতায়াত করেন ব্যাংক কর্মকর্তা মো. জুয়েল হোসেন। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ’ভাড়াতো প্রতিনিয়তই বাড়ে কিন্তু আমাদের আয়তো আর বাড়েনা। আর বাস ছাড়াতো রাস্তায় চলার কোন উপায় নেই। ফলে অতিরিক্ত খরচ দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। এতে আমাদের সংসার চালতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।’

তবে সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে না  বলে জানান তানজিল পরিবহন বাসের হেল্পার (চালকের সহায়তাকারী) শিশির। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ’যে ভাড়া ১০ টাকা ছিলো তা এখন ১৫ টাকা হয়েছে। আর যা ১৫ টাকা ছিলো তা ২৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। এভাবে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। এর থেকে বেশি নেয়া হচ্ছে না।’

মিরপুর-১ থেকে যে বাসগুলো ফার্মগেট, শাহাবাগ হয়ে গুলিস্থান যায়, সেখানে আগে মিরপুর-ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া নিতো ১৫টাকা, শাহাবাগ পর্যন্ত নিতো ২৫টাকা আর গুলিস্থান নিতো ৩৫টাকা। এখন সেখানে ফার্মগেট পর্যন্ত নিচ্ছে ২০টাকা, শাহাবাগ ৩৫টাকা, আর গুলিস্থান পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে ৪০টাকা।

অন্যদিকে যে বাসগুলো মিরপুর ১ থেকে নিউমার্কেট যায় সেগুলো আগে নিউমার্কেট পর্যন্ত ভাড়া নিতো ১৫ টাকা। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে এখন নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।

আর যে বাসগুলো মিরপুর ১ থেকে কলেজগেট, শাহাবাগ, মৎসভবন হয়ে যাত্রাবাড়ি যায় সেগুলো আগে কলেজগেট পর্যন্ত নিতো ১০টাকা, শাহাবাগ পর্যন্ত ২০টাকা, মৎস্য ভবন পর্যন্ত ৩০টাকা আর যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত ৪০টাকা। নতুন ভাড়া কার্যকরের ফলে এখন কলেজগেট পর্যন্ত ১৫টাকা, শাহাবাগ পর্যন্ত ২৫ টাকা, মৎস্য ভবন ৩৬টাকা এবং যাত্রাবাড়ী ৫০টাকা নেওয়া হচ্ছে।

তবে মহানগরের ভাড়া নির্ধারণ হলেও এখনো নির্ধারণ হয়নি দূরপাল্লার বাসের ভাড়া। চার্ট হাতে না আসা পর্যন্ত আগের ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে জানান বাস কাউন্টারগুলোর ইনচার্জরা। তবে আগের ভাড়ার সাথে অল্প কিছু ভাড়া যোগ হওয়ার কথাও স্বীকার করেন তারা।

এ বিষয়ে সার্বিক পরিবহন লিমিটেডের কাউন্টার ইনচার্জ মো. শামিম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘এখনো আমরা হাতে চার্ট পাই নেই। তাই ভাড়া এখনো আমরা বাড়াতে পারি নেই। তবে আগের ভাড়ার সাথে ২০ টাকা করে বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে।’

তবে দূরপাল্লার ভাড়া ২৭ শতাংশের বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী। তাদের মধ্যে একজন ঝিনাইদহের বাসিন্দা সবুজ আহমেদ। সকালে ঝিনাইদহে যাওয়ার জন্য গাবতলি এসে তিনি জানতে পারেন নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে ১৫০ টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ’ভাড়া বাড়ালো ২৭ শতাংশ। কিন্তু এরা এর চেয়েও বেশি নিচ্ছে। ঝিনাইদহর ভাড়া ছিলো ৪০০টাকা, এখন সেটা নিচ্ছে ৫৫০ টাকা। যা ২৭ শতাংশেরও অনেক বেশি। এতে তাদেরতো ক্ষতি হচ্ছে না। আমাদের উপরই এর চাপ এসে পড়ছে।’

একই ধরনের ক্ষোভের কথা জানালো  পোশাক শ্রমিক মো. ফকরুল ইসলাম। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ’ভাড়া বাড়ার সাথে  আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে অনেক বেশি। অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আগে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ভাড়া ছিলো ১০০ টাকা। এখন বাস ভাড়া আদায় করছে ১৫০ টাকা। এতো বেশি যদি ভাড়া দিতে হয় তবে সংসার চালাবো কিভাবে।’

তবে যাত্রীদের অনেকে নতুন ভাড়া দিতে চাচ্ছেন না বলে জানায় সূর্যমুখী পরিবহনের কাউন্টার ইনচার্জ মো. সারোয়ার হোসেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ’যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাচ্ছে না। আমরা আগের ভাড়া থেকে ৫০-১০০ টাকা বাড়িয়ে চাচ্ছি। কিন্তু যাত্রীরা সেটাই দিতে রাজি হচ্ছে না। চার্ট পেলেও ওই ভাড়া না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছ।’

এদিকে, বাসের ভাড়া বাড়ানোকে অযোক্তিক, গণবিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ’মালিকরা যে ভাড়া চেয়েছেন সেই ভাড়াই নির্ধারণ করা হয়েছে। জ্বালানী মূল্য যে হারে বাড়ানো হয়েছে তার থেকে দ্বিগুন ও তিনগুন হারে মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে। এমনিতেই ভাড়ার একটি অস্বাভাবিক অবস্থা ছিলো। এখন আরো বেশি অস্বাভাবিক অবস্থানে চলে গেলো বলে তিনি মনে করেন।

Link copied!