ভিসি নিয়োগে বিএনপি সংশ্লিষ্টদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল: উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২২, ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম

ভিসি নিয়োগে বিএনপি সংশ্লিষ্টদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল: উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

ছবি: সংগৃহীত

পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগে মৃদু বা নিষ্ক্রিয় বিএনপি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল।

ঢাকায় রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (RAPID) আয়োজিত “এলডিসি উত্তরণের প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ বাজেট” শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনায় তিনি শিক্ষা খাতে নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তৎকালীন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন।

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “আমরা যেহেতু অরাজনৈতিক সরকার, তাই কাউকে সরাসরি দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব ছিল না। বড় সংকট ছিল, এত গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য ছিল, অথচ আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব কম লোককেই চিনতাম যাদের উপর আস্থা রাখা যায়।”

তিনি স্বীকার করেন, এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বন্ধুদের সাহায্য নিয়েছিলেন। সে সময় তিনি তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তিনি বলেন, “আমি ফখরুলকে অনুরোধ করেছিলাম দলীয় স্বার্থের বাইরে থেকে তার পরিচিত সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করতে।”

ওয়াহিদউদ্দিন জানান, ফখরুল সৎভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, “গত ১৫ বছরে আমাদের লোকজন তেমন উচ্চ পদে উঠতে পারেনি। আমি কীভাবে জানব তারা সৎ বা যোগ্য?” তবুও পরে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবিত নামের তালিকা পাঠানো হয়, যদিও এটি আনুষ্ঠানিক দলীয় চ্যানেলের মাধ্যমে ছিল না।

নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি যাদের সুপারিশের জন্য বলেছিলাম, তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কেউ বিবেচনায় আসবে না। বিবেচনায় থাকবে শুধু বিএনপির সাথে মৃদু বা নিষ্ক্রিয়ভাবে যুক্তরা।”

তিনি আরও স্বীকার করেন, সবকিছু সত্ত্বেও ভিসি নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যম এবং জনমনে রাজনৈতিক পটভূমি নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরই কোনো না কোনো রাজনৈতিক ট্যাগ আছে—সাদা প্যানেল, নীল প্যানেল বা অন্য কিছু। আসলেই কি কেউ পুরোপুরি নিরপেক্ষ?”

তিনি জানান, বিএনপি মহলে এটি নিয়ে মজার একটি কথা চালু ছিল: “সে আমাদের সক্রিয় কাউকে কখনো নেয় না, শুধু মৃদু বা নিষ্ক্রিয়দেরই নেয়।” 

ইতিহাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বর্তমান সময় পর্যন্ত ভিসি নিয়োগে কখনো আন্তর্জাতিক গবেষণা বা প্রকাশনার মতো একাডেমিক যোগ্যতা গুরুত্ব পায়নি। “এই প্রথমবার এসব মানদণ্ড গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে,” তিনি যোগ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, তার সময়কালের সিদ্ধান্তগুলো তিনি নথিভুক্ত করতে চান যেন ভবিষ্যৎ সরকার চাইলে এই রেকর্ড অনুসরণ করতে পারে বা কোনো বিচ্যুতি হলে তা পরিমাপ করা যায়।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এক অনুসন্ধানে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ৪৭ জন ভিসির মধ্যে অন্তত ৩০ জন এবং ৪০ জন প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের মধ্যে ১৮ জনের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল।

Link copied!