গণভবনে টিউলিপের প্রচারপত্র, লেবার পার্টির পোস্টার: দ্য টাইমস

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম

গণভবনে টিউলিপের প্রচারপত্র, লেবার পার্টির পোস্টার: দ্য টাইমস

ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি আবাস ছিল গণভবন। রাজধানী ঢাকার এই বাড়িতে কড়া পাহারায় বসবাস করতেন তিনি। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় গত ৫ আগস্ট হাজারো মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েন। ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহার্য জিনিসপত্র বের করে নিয়ে যায় লোকজন।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্য দ্য টাইমসের এক সাংবাদিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি আবাস গণভবনে ঢোকার সুযোগ পান। সেখানে তিনি কিছু অপ্রত্যাশিত জিনিসপত্রের দেখা পান।

গত শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমতি নিয়ে গণভবনে প্রবেশ করে ওই প্রতিবেদক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের প্রচারপত্র, লেবার পার্টির পোস্টার, নামী ব্র্যান্ডের শপিং ব্যাগ, দামি কলমের মোড়ক, বিদেশি বিশিষ্টজনদের উপহার দেওয়া পোশাক-গয়না, তৈজসপত্রসহ আরও নানা জিনিস এখানে-সেখানে পড়ে থাকতে দেখেন।

রবিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গণভবনে কড়া পাহারায় বসবাস করতেন হাসিনা। ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভের মুখে সময় গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে হাজারো মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েন। এই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যম ভাইরাল হয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রচার হয়।

সেই থেকে গণভবন কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। পাহারা দিচ্ছেন আনসার সদস্যরা। সেখানে সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

গণভবনে টিউলিপ-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র

ধুলায় ঢাকা থাকা একটি রাজনৈতিক প্রচারপত্র পড়ে থাকতে দেখেন টাইমসের প্রতিবেদক। এটি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপের। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। টিউলিপ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। টিউলিপের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার আমলের দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।

টিউলিপের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও কিছু জিনিস এখনো গণভবনে পড়ে আছে। এর মধ্যে একটি ‘ধন্যবাদ নোট’ দেখা গেছে।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ এলাকা হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের লেবার পার্টির স্থানীয় সদস্যদের উদ্দেশে সেটি লেখা।

আরেকটি ছিল টিউলিপের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন। জীবনমানের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চরম সংকটে পড়া মানুষের জন্য টিউলিপ যা যা করেছিলেন, সেসব সম্পর্কে পাঠকদের পড়ার আহ্বান রয়েছে তাতে।

তবে টিউলিপ বরাবরই দাবি করে এসেছেন, খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে তার কখনোই রাজনৈতিক বিষয়ে কথাবার্তা হতো না। ২০১৭ সালে তিনি বলেছিলেন, খালার সঙ্গে ‘কখনোই’ রাজনীতি নিয়ে কথা বলেননি তিনি।

একই বছর এক সাংবাদিকের পক্ষ থেকে টিউলিপের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা এক আইনজীবী ‘গুমের’ ঘটনায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কথা হয়েছে কি না। তখন টিউলিপ অন্তঃসত্ত্বা ওই সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছিলেন। পরে ওই সাংবাদিক পুলিশে অভিযোগ দেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সম্প্রতি টিউলিপের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার শাসনামলে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিউলিপ ও তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে এমন তিনটি সম্পত্তিতে বসবাস করেছেন, যেগুলো শেখ হাসিনার মিত্ররা তদেরকে বিনামূল্যে দিয়েছেন।

টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়, এসব সম্পত্তির মধ্যে একটি কেনা হয়েছিল অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে। কর ফাঁকির আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে নিবন্ধিত ওই কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের দুই ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আলোচিত পানামা পেপারসে ওই কোম্পানির নাম এসেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, টিউলিপের ব্যবহার করা সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বেইডনক।

যদিও টিউলিপ বরাবর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 গতকাল রোববার ‘টিউলিপের ওপর ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি সরকারের পূর্ণ আস্থা আছে’, এই বক্তব্যে সম্মতি জানাতে অস্বীকার করেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানমন্ত্রী পিটার কাইল।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ চলছে বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি জানান, ফ্যাসিবাদের বিপদ সম্পর্কে দেশ-বিদেশের মানুষকে সতর্ক করতে এটাকে জাদুঘর করা হচ্ছে।

গণভবনে টিউলিপের ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের কক্ষ

একটি করিডোর পেরিয়ে এগিয়ে গেলেই টিউলিপের ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের কক্ষ। তিনি ‘ববি’ নামেই বেশি পরিচিত। সেখানে মেঝেতে তার বেশ কিছু জাতিসংঘের বিজনেস কার্ড পড়ে ছিল। তাতে ‘গভর্ন্যান্স এক্সপার্ট’ হিসেবে তার পরিচয় লেখা আছে। পড়ে ছিল ববির মুঠোফোনের বিলের নথিও।

টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সরকারের মদদপুষ্ট ‘প্রোপাগান্ডা’ ইউনিটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ববি।

 সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার বাংলা। 

Link copied!