রাজধানীর রেস্তোরাঁয় ভরা ভবনগুলো আসলে ‘টাইম বোমা’ : স্থপতি ইকবাল হাবিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২, ২০২৪, ০৩:২৮ এএম

রাজধানীর রেস্তোরাঁয় ভরা ভবনগুলো আসলে ‘টাইম বোমা’ : স্থপতি ইকবাল হাবিব

রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। সংগৃহীত ছবি

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, ঢাকার অনেক বাণিজ্যিক ভবনে যেভাবে বিভিন্ন তলায় রেস্তোরাঁ তৈরি করা হয়েছে, তাতে মূলত ভবনগুলো ‘টাইম বোমা’য় পরিণত হয়েছে। যেন কখন এই বোমা বিস্ফোরিত হবে, সেই অপেক্ষায় আছেন সবাই।

রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, যে কার্যক্রম চালানো হবে, সে অনুযায়ী ভবনের নির্মাণ-কাঠামো ও নকশা করতে হয়। ইচ্ছা করলেই বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ করার কোনো সুযোগ নেই। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রেস্তোরাঁর জন্য যে ধরনের রান্নাঘর দরকার হয়, তা সাধারণ বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য তৈরি করা ভবনে থাকে না। রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার দরকার হয়।

ঢাকার এই ভবন ছাড়া বনানী, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন জায়গায় অনেক বহুতল ভবনের বিভিন্ন তলায় রেস্তোরাঁ তৈরি করা হয়েছে। সেসব ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা কতটুকু মেনে চলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইকবাল হাবিব বলেন, ‘এগুলো কিন্তু টাইম বোমার মতো বসে আছে। আমরা যেন অপেক্ষা করছি, কখন আবার আরেকটি এ রকম ঘটনা ঘটবে।’

স্থপতি ইকবাল হাবিবের কাছে প্রশ্ন ছিল, বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুনে এত মানুষের মৃত্যুর দায় আসলে কার? জবাবে তিনি বলেন, একটি ভবন গড়ে ওঠা থেকে শুরু করে এর কার্যক্রম চলা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপের সঙ্গে সরাসরি ছয়টি সংস্থা যুক্ত থাকে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। কারণ, এসব সেবা সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এমন ভবন গড়ে ওঠা ও এর কার্যক্রম চলার কথা।

ইকবাল হাবিব বলেন, তিনি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পুরো ভবনটি ঘুরে দেখেছেন। এতে তিনি সেখানে সিঁড়ি, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, ভবনের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ এবং আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে ইমারত বিধিমালার লঙ্ঘন দেখেছেন।

ইকবাল হাবিব বলেন, অগ্নিনিরাপত্তার প্রথম শর্ত অনুযায়ী উন্মুক্ত স্থানে সিলিন্ডার রাখার সুযোগ নেই। আর ভবনের জরুরি নির্গমন (ফায়ার এসকেপ) পথেও এ ধরনের সিলিন্ডার রাখা যাবেই না। অথচ ভবনটির জরুরি নির্গমন পথে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার সজ্জিত করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহর অসীম রহমত যে, সেগুলো ব্লাস্ট (সিলিন্ডার বিস্ফোরণ) করেনি। যদি কোনো কারণে সেখানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটত, তাহলে আগুন পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ত।

কাচ দিয়ে ঘিরে যেভাবে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে, তারও সমালোচনা করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। নিজের অভিমতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ রকম একটি দেশ, যে দেশে বছরে আট মাস শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ছাড়া থাকা যায়। সেখানে এ ধরনের কাচঘেরা আবদ্ধ ভবন তৈরি করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ ধরনের ভবনে বায়ু চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। এগুলোয় বেশি বেশি এসি ব্যবহারের কারণে অতিরিক্ত বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।

ঢাকার ভবনগুলো নিরাপদ করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর বিদেশি পোশাকক্রেতাদের (বায়ার) চাপে ও সরকারের চেষ্টায় মাত্র আড়াই বছরে সর্বোচ্চ সবুজ শিল্পের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে বাংলাদেশ। তাঁর বিশ্বাস, এখন টাস্কফোর্স গঠনের মধ্য দিয়ে মাত্র তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ভবনগুলো নিরাপদ করা সম্ভব হবে।

Link copied!