মার্চ ২৫, ২০২৪, ০৪:১৪ এএম
দিনাজপুরের কাহারোলে ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত ১৩ মার্চ নির্মাণকাজ বন্ধ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন দিনাজপুরের রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ। এই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন নির্মাণকাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
কাজ বন্ধ রাখার কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসক বলেছেন, "এটা রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমি। আমি নিজেও একজন ট্রাস্টি। আমরা বৈঠক করার পর আজ আমি নিজে সেখানে গিয়েছিলাম। মসজিদ কমিটির সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের নির্মাণ পুরোপুরি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। একইসাথে, বিকল্প জায়গায় মসজিদ নির্মাণের কথা বলেছি।”
গত পহেলা মার্চ দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জাকারিয়া জাকা মসজিদের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ১৩ মার্চ নির্মাণকাজ বন্ধ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ।
আবেদনকারী রণজিৎ কুমার সিংহ জানান, "আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থলে এসে সকলের সঙ্গে কথা বলে বলেছেন এটি রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমি। তাই এখানে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না।
কিন্তু জেলা প্রশসানের এই সিদ্ধান্ত মসজিদ কমিটির মনঃপূত হয় নাই। এই কমিটির সভাপতি সভাপতি আব্দুস সালাম জানান, "জেলা প্রশাসক মহোদয় এসে আমাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলেছেন। তবে এই জমি এক সময় খাস জমি ছিল। পরে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। এখানে যে মসজিদটি ছিল সেটা ৭৫-৮০ বছরের পুরনো। টিনশেড ছিল, মুসল্লিদের জায়গা হতো না, সেই কারণে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলে তিনতলার ভিত দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছিল।”
তবে এই কাজ কতদিন বন্ধ রাখা হবে এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কমিটির সকলে বসে সিদ্ধান্ত নিব পরবর্তী সিদ্ধান্ত কেমন হবে।
রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, "কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মৌজায় সিএস ২ নম্বর খতিয়ানটি শ্রীশ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ পক্ষে সেবাইত অনারেবল মহারাজা জগদীশ নাথ রায় নামে প্রচারিত। ওই খতিয়ানে কান্তজিউ বিগ্রহর নামে ৯৪ দশমিক ০৭ একর জমি রয়েছে। এসএ ০৫ নম্বর খতিয়ানে দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের পক্ষে জিম্মাদার জেলা প্রশাসক ১৯টি দাগে ৬২ দশমিক ৪৬ একর জমি রয়েছে। বাংলা ১৪৩০ সন পর্যন্ত জমির খাজনা হালনাগাদ রয়েছে। গত ১০ মার্চ জানতে পারি যে, কান্তনগর মৌজার ১৬ নম্বর দাগে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তির ওপর একটি পাকা মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে। এটা শুনে গত ১১ মার্চ নির্মাণাধীন মসজিদের জায়গাটি পরিদর্শন করি, দেখি মসজিদটি রাজ দেবোত্তর এস্টেটের কান্তনগর মৌজার এসএ ৫ নম্বর খতিয়ানের ১৬ নম্বর দাগের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে।”
লিখিত অভিযোগে রণজিৎ কুমার সিংহ আরও বলেন, "ঘটনাস্থলে উপস্থিত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোজাম্মেল হকের কাছে কীভাবে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করছেন, জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯৭৬ সালে ডিসি দিনাজপুর ওই জমি তাদের দিয়েছেন। তার কাছে দলিল দেখতে চাইলে তিনি একটি হাতে লেখা তিন পৃষ্ঠার আপসনামার ফটোকপি দেন। কথিত আপসনামাটি যাচাই করে দেখি, উহা কোনো বরাদ্দ নয়। এটি কোনো রেজিস্ট্রিকৃত জমির দলিল নয়। ওই কাগজে মালিকানা হস্তান্তরের কোনো কথা উল্লেখ নেই। আপসনামাটি ভুয়া ও বানোয়াট মনে হয়। তা ছাড়া ১৯৯৯ সালের ৫১ ডিএলআর বলা হয়েছে, দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়, উহা সব সময়ের জন্য দেবোত্তর সম্পত্তি।”
পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরের দেবোত্তর ভূমিতে অবৈধভাবে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। স্থানীয় অনেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার জন্য প্রশাসনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
মসজিদের কাজ বন্ধের আদেশকে ঘিরে বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে দিনাপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, "জেলা প্রশাসন মসজিদ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পর কেউ যেন গুজব ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সেদিকে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। এছাড়া, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
মসজিদের কাজ উদ্বোধন করা স্থানীয় সংসদ সদস্য জাকারিয়া জাকা জানান, "এটি কার জায়গা সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। মসদের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করার জন্য আমাকে দাওয়াত করা হয়েছিলল। অভিযোগ আসার পর জেনেছি।