অবশেষে দেবী দুর্গা চলেই আসলেন মর্ত্যে। সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভক্তদের বিপদ নাশ করতেই তার আগমন। তার আগমনীতে প্রকৃতিতে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। শিউলির গন্ধ আর পদ্মের আভা যেন বারবার ইঙ্গিত দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনকে।
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া আজ। এ দিন থেকেই শুরু দেবীপক্ষের। শ্রীশ্রী চন্ডীপাঠের মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই ‘চন্ডী’তেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া।
পুরাণমতে, এইদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এই দিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা করতে হবে মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।
আজ ১৪ ই অক্টোবর রমনা কালী মন্দিরে দেবী পক্ষের পূজা আরম্ভ হলেও ষষ্ঠী আরো ছয়দিন পর আরম্ভ হবে । ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হয়েছিল মহালয়ার পূজা । ভক্তদের সমাগমে মুখর ছিলো রমনা কালী মন্দিরের চন্ডীপাঠ ও বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান। পরিবার পরিজন সহ অনেকেই এসেছিলেন মহালয়ার অনুষ্ঠানে । বায়্যেজ্যেষ্ঠদের অনেকেই এসেছেন,নাতি নাতনিকে সঙ্গে করে । তাদের একটাই ইচ্ছে মহালয়ার কথা যেন কখনো বন্ধ নাহয় । বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মহালয়ার তারিখ সম্পর্কে বলতে পারে না । শাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের উচিত সনাতনী নতুন প্রজন্মেকে সব বিষয়ে জ্ঞাত করা , মহালয়া শব্দটা যেন তারা ভুলে না যায়।
এবছর দুর্গা আসবেন ঘোটক চড়ে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে । যার অর্থ হচ্ছে কোনো বিপদ সংকেত আসছে মর্ত্যেলোকের জন্য। ভারী বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস কিংবা হতে পারে তার থেকেও বেশি কিছু। তা যাই হোক দেবী দুর্গা যখন চলেই এসেছেন
মর্ত্যে তখন সব নাশকে বিনাশ করবেন তিনি এমনটাই আশা রাখছেন ভক্তরা।
মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীকরূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারিত করে এবং বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়।
মহালয়ার আরও একটি দিক হচ্ছে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন বলে বিবেচনা করা হয় একে।
ষষ্ঠীর অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে আছেন অনেক ভক্ত। আগামী ২০ অক্টোবর শুরু হবে ষষ্ঠীর ঘনঘটা। দেবী দুর্গার আনুষ্ঠানিক পূজা ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই আরম্ভ হবে।
রমনা কালী মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা বলেন, মহালয়া শুধু আগমনী নয় বরং ষষ্ঠী থেকে দশমী অবধি হাজারো ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে । সমস্ত বিপত্তি কাটিয়ে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যেই আছেন মন্দির কমিটির সদস্যরা ।