হরতাল- অবরোধ দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় বিএনপি ভাবনায় নতুন কর্মসূচি

জাতীয় ডেস্ক

নভেম্বর ২৪, ২০২৩, ০৫:২১ এএম

হরতাল- অবরোধ দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় বিএনপি  ভাবনায় নতুন কর্মসূচি

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবিতে একের পর এক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়েও কাজ হচ্ছে না কোন। 
কারন গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় পুলিশি ব্যবস্থায় বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর নেতা-কর্মীদের গণ হারে গ্রেফতারের কারণে কর্মসূচি পালনের মত যথেষ্ট কর্মী মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বিকল্প কর্মসূচির কথা বিবেচনায় নিতে হচ্ছে বলে দলগুলোর কয়েক নেতা জানান।
বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর বিকল্প কর্মসূচি অনুযায়ী  সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুযায়ী আগামী সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিনে ইসি অভিমুখে যাত্রা অথবা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা রয়েছে । 

এর বাইরে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, ঘেরাও-অবস্থানের প্রস্তাবও এসেছে। অবশ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে দলগুলো সূত্রে জানা গেছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এক প্রতিবেদনে বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে। কোন কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কেমন কর্মসূচি আসবে, সেটা পরিস্থিতি ও সরকারের আচরণের ওপরেও অনেকখানি নির্ভর করছে।

এদিকে আন্দোলনে বৈচিত্র্য আনার কথা উঠলেও বিএনপি ঠিকই ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আবারও। আগামী রবিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত পালনের জন্য আলাদাভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

বৃহস্পতিবার ( ২৩ নভেম্বর )  এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের কর্মসূচির ঘোষণা দেন  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

এর মধ্য দিয়ে এক মাসেরও কম সময়ে সপ্তম দফায় অবরোধের ডাক দিল  বিএনপি।

২৮ অক্টোবরের পর থেকে এরই মধ্যে ১৩ দিনের অবরোধের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। সর্বশেষ ষষ্ঠ দফায় বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান প্রতিবেদনে বলেন, দল পূর্ণ ধৈর্য বজায় রেখে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপি ও সমমনা দলের ডাকা অবরোধের মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে যান চলাচল বেড়েছে। তবে দূরপাল্লার যানবাহনে ছিল না যাত্রীর চাপ। তবে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দূরপাল্লার কয়েকটি বাসও ছাড়ে। রাজধানীতে কোথাও কোথাও ছিল তীব্র যানজট।

অবরোধ চলাকালে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কিছু যানবাহনে আগুন ও ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ ৯ জন মানুষ আহত হয়েছে। এ সকল নাশকতার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে সারা দেশে দেড় শতাধিক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। তবে বিএনপি দাবি করেছে ৪১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

রাজধানী ছাড়াও গাজীপুর দক্ষিণ সালনায় চলন্ত দুইটি কাভার্ডভ্যান থামিয়ে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ সময় চালকেরা দ্রুত নেমে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পিকআপ ভ্যানে, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে পাট বোঝায় ট্রাক, বরগুনার আমতলীতে যাত্রীবাহী বাস ও কুমিল্লার হোমনায় গ্যারেজে রাখা দুটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘটনাগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

হামলায় বরগুনায় বাসের চালক আহত হন। গত বুধবার রাতে রাজশাহীর বায়া বাজারে টহল পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল হামলা আহত হয়েছেন দুই পুলিশ কনস্টেবল। তাঁরা হলেন মো. জাহিদুল ও শামীম হায়দার। রাজশাহী বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। রাজশাহী নগরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৩ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত ২০৫টি যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, অবরোধ ও হরতালে ২৯ অক্টোবর হতে ২২ নভেম্বর এই ২৫ দিনে ৬৮৬ গাড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে ৩১০ টিতে ভাঙচুর ও ৩৭৬ টিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, ২২ থেকে ২৩ নভেম্বর অবরোধের ২ দিন ৭টি যানবাহনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা নগরীতে দুটি, সাভার, বালিয়াকান্দি, গাজীপুর এবং রাজশাহীতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। 

এদিকে অবরোধের সমর্থনে গতকাল রাজধানীর ফকিরাপুল, মতিঝিলসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নেতারা। 

ফকিরাপুলে ঝটিকা মিছিল শেষে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিদিনই পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে। তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের না পেয়ে তাদের বাবা-ভাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতেও অবরোধ রুখতে পারছে না বলে দাবি রিজভীর। 

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আগের মতো গতকালও ছিল তালাবদ্ধ। ভবনটির দুই পাশে পুলিশ পাহারা ছিল। জামায়াতে ইসলামীও গতকাল পৃথক মিছিল বের করেছে রাজধানীতে।

তাইতো অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুরের সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারের জন্য দেশব্যাপী অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‍্যাব ও পুলিশ। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী বুধবার ( ২২ নভেম্বর ) মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ( ২৪ নভেম্বর ) রাত ১১টা পর্যন্ত দেড় শতাধিক জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বিএনপি দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে দলটির ১৫ হাজার ৬০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Link copied!