মানব পাচারের চেষ্টা: টেকনাফের পাহাড় থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার, আটক ৩

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫, ০৫:২২ পিএম

মানব পাচারের চেষ্টা: টেকনাফের পাহাড় থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার, আটক ৩

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার গহীন পাহাড়ে মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য জড়ো করা নারী-শিশুসহ ৮৪ জনকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব ও বিজিবি। এ সময় অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে পাচারকারী চক্রকে তিন সদস্যকে।

রোববার রাতে উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাহারছড়া ও কচ্ছপিয়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানান টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান।

আটকরা হলেন- বাহারছড়ার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ (২১), একই এলাকার সাইফুল ইসলাম (২০) এবং মো. ইব্রাহিম (২০)।

সোমবার দুপুরে বিজিবি ও র‌্যাবের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, “বাহারছড়া ও কচ্ছপিয়ায় গহীন পাহাড়ে একটি পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজনকে আটক করে রেখেছেন।

“বিষয়টি জানতে পেরে রাতে বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা প্রথমে বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে পাচারকারী সন্দেহে একজনকে আটক করেন। এ সময় তার কাছ থেকে চারজনকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়ে আলাদা অভিযান চালিয়ে তিনটি আস্তানা থেকে ৮০ জনকে উদ্ধার করা হয়।”

উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ১৮ বাংলাদেশি নারী, পুরুষ এবং ৬৬ জন রোহিঙ্গা আছেন; তাদেরকে পাচারের জন্য সেখানে জড়ো করা হয়েছিল বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান।

তিনি বলেন, ১২ ঘণ্টার দুঃসাহসিক অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি রামদা, একটি চাকু, তিনটি অস্ত্রের চেম্বার থেকে তিনটি গুলি উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

মানব পাচার চক্রের বিস্তার ও কার্যক্রম

বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে থাকা আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত পাচারকারীরা স্থানীয়দের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ, আটকে রাখা এবং মুক্তিপণ আদায়ের মত কর্মকাণ্ড চালায়।

প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের বলা হয়, মালয়েশিয়ায় গেলে পাওয়া যাবে উচ্চ বেতনের চাকরি, সহজ বিদেশ যাত্রার সুযোগ এবং পরবর্তীতে আয় করে খরচ পরিশোধের সুযোগ। এরপর তাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে আটক রেখে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপণ।

কঠোর অবস্থানে বিজিবি

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে বিজিবি। জুলাইয়ে ১৫ জন, অগাস্টে চারজন এবং সেপ্টেম্বরে ১৭ পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে।

“টেকনাফের হোসেন, সাইফুল এবং নিজামের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন শাখা ও দলে বিভক্ত হয়ে মানব পাচার করে থাকেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত কিছু মাঠ পর্যায়ের বেতনভুক্ত সদস্য মালয়েশিয়ায় যাত্রী সংগ্রহের উদ্দেশে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান,” বলেন তিনি।

মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে বিস্তৃত এই চক্রকে দমন করতে সব বাহিনীর সমন্বয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা।

বিদেশ যাওয়ার আগে তথ্য যাচাই এবং সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান।

আট মাসে ৬২ পাচারকারী আটক  

চলতি বছরের প্রথম আট মাসে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৬২ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এ ছাড়া পলাতক আছেন ২৪ আসামি। তবে এই চক্রের প্রধানসহ বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে বিজিবি।

এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য টেকনাফের কচ্ছপিয়ার গহীন পাহাড়ের আস্তানায় বন্দি করে রাখা নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৬৬ জন উদ্ধার করে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড।

এ ঘটনার দু্ই দিন আগে ১৬ সেপ্টেম্বর পাচারকারীদের আস্তানা থেকে নারী ও শিশুসহ ১১ জনকে উদ্ধার করে বিজিবি। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় ১২ জনকে। এ ঘটনায় হোসেন, সাইফুল এবং নিজামকে পলাতক আসামি করে আটক ১২ জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়।

এ ছাড়া ১৪ সেপ্টেম্বর সাগরপথে মিয়ানমারের ১০০ নাগরিককে পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ করে বিজিবি। সেই সময় আটক করা হয় চারজনকে।

Link copied!