নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৩:২২ পিএম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর কিংবা তারও কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, `আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকার পাঁচ বছরের হয়। নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ সম্ভবত চার বছর হতে পারে।
‘কারণ, মানুষ আরও দ্রুত সময়ে সরকারের পরিবর্তন চায়। কাজেই এটা (অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ) নিশ্চিতভাবেই চার বছরের কম হবে। আরও কম হতে পারে। এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে মানুষের চাওয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ওপর।`
ড. ইউনূস বলেন, `যদি রাজনৈতিক দলগুলো চায় এটা (সংস্কার) বাদ যাও, নির্বাচন দাও। আমরা সেটাই করবো। তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে চার বছর থাকছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, `আমি সেটা বলিনি যে চার বছর থাকবো। আমি বলেছি, আমাদের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর হতে পারে। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য, যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা।`
তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো ইচ্ছে নেই বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। বলেছেন, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি যা করি সেটা নিয়েই খুশি। জীবনের এই শেষ সময়ে এসে সেটা বদলাতে চাই না।
সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অতীতে কখনো কথা হয়নি। তাই ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির মতো রিপাবলিকান পার্টিতে তাঁর বন্ধু আছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, ‘আপনি নিশ্চয় জানেন, মার্কিন নির্বাচনের আগে ট্রাম্প তাঁর মতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তার নিন্দা জানিয়েছেন।’
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটা বেশির ভাগই অপপ্রচার (প্রোপাগান্ডা)। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অপপ্রচার। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই অপপ্রচারের বেশির ভাগই ভারতীয় দিক থেকে আসা।...সম্ভবত এই উত্তেজনা জিইয়ে রাখার জন্য এটা করা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।
ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তেজনা থাকা ও তা মোকাবিলা করাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে অতীতে কখনো আমার আলাপ-আলোচনা হয়নি। তাই ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। আর আপনি যদি রিপাবলিকান পার্টির কথা বলেন, তাহলে বলব, আমার ডেমোক্রেটিক পার্টিতে বন্ধু আছে, রিপাবলিকান পার্টিতে বন্ধু রয়েছে। আমাকে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল দিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস) ভোট দিয়েছিল। এ বিষয়ে উভয় পার্টির সদস্যরা শতভাগ একমত হয়েছিলেন। আমাকে এ মেডেল দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। রিপাবলিকান পার্টি উদ্বিগ্ন বা ডেমোক্রেটিক পার্টি উদ্বিগ্ন বা ট্রাম্প উদ্বিগ্ন—এই হিসেবে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে হঠাৎ করে কোনো নেতিবাচক কিছুর উদ্ভব হবে—এমন শঙ্কা আমি দেখছি না। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এমন নয়, যা প্রেসিডেন্ট কে, তার ওপর নির্ভর করে। দেশটির এই নীতির একটি স্থিতিশীল অংশ আছে।’
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাইবো: ড. ইউনূস
ভারতে বসে শেখ হাসিনার কথা বলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, `তিনি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আমরা বলেছি, আপনারা তাকে থাকতে দিয়েছেন, সেটা ঠিক আছে। তবে, এটা নিশ্চিত করুন যেন তিনি আমাদের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি না করে।`
শেখ হাসিনা নিজেকে এখনো প্রধানমন্ত্রী দাবি করার বিষয়ে তিনি বলেন, `এটা বাস্তবতা নয়। এমনকি তাকে আশ্রয় দেওয়া দেশ ভারতও বলছে যে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী।`
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে।