৫৩ দিনের গুম জীবনের বর্ণনা দিলেন ফটো সাংবাদিক কাজল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ৩০, ২০২৪, ০২:২৯ পিএম

৫৩ দিনের গুম জীবনের বর্ণনা দিলেন ফটো সাংবাদিক কাজল

ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল

৫৩ দিন ধরে গুম জীবনের ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। বলেছেন, কখনও বিকট শব্দের মাধ্যমে, আবার কখনও নগ্ন করে নির্যাতন চালানো হয়েছে তাকে। নামাজরত অবস্থায়ও তাকে মারধর করা হয়। নির্যাতনের একেকটি গল্প যেন আরেকটিকে ছাড়িয়ে যায়। নির্যাতনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে শরীরের রক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিনি এখন আক্রান্ত হয়েছেন গ্যাংগ্রিন রোগে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা এই ফটো সাংবাদিক চ্যানেল ২৪-কে জানিয়েছেন গুম জীবনের ভয়াবহ নির্যাতনের অভিজ্ঞতাগুলো। জানিয়েছেন, নির্মম নির্যাতনের কারণে তার একটি পা কেঁটে ফেলা লাগতে পারে।

বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল ২৪’র প্রতিবেদনে ফটো সাংবাদিক কাজল বলেন, “আমাকে যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে মাথা উঁচু করে রাখা যেত না। কোনও দিকে ঘুরে দাঁড়ানোও যেত না। আমাকে উলঙ্গ করে রাখা হয়েছে। রুমে সাউন্ড টর্চার করা হয়। ভয়ংকর শব্দ হতো, যেন কানের পর্দা ফেটে যায়। হঠাৎ একদিন শুনি রোজার মাস চলছে। পরে ওজু ছাড়াই নামাজ পড়ি। এ সময় হাতকড়া পরানো ছিল, চোখ বাঁধা ছিল। ফলে সেজদা দিতে গিয়ে পড়ে যাই। তখন শব্দ হয়। এরপর কয়েকজন এসে আমাকে মারল।”

স্ত্রীকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আমার স্ত্রীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (আসাদুজ্জামান খান কামাল) কল করে বলেছিলেন- আপনার স্বামী অনেকের বিরুদ্ধে চলে গেছে। আমি সবাইকে ম্যানেজ করতে পেরেছি কিন্তু মেহেরপুরের প্রতিমন্ত্রীর কাছে আপনি মাফ চান।”

এই ফটো সাংবাদিক বলেন, “যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে একটি তালিকা আমি প্রকাশ করি। তালিকায় ৩৪ জনের মতো নাম ছিল। নূর আলী নামে একজন নিজের হোটেলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য উদ্ধারের জন্য অনেককেই আশ্রয় দেয়। ধীরে ধীরে এর গভীরে গিয়ে (অনুসন্ধানে) দেখি এখানে মন্ত্রী-এমপিরাও যাতায়াত করেন।”

শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, “(আওয়ামী লীগ সরকারের) নির্যাতনে রক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শরীরে বাসা বেঁধেছে গ্যাংগ্রিন রোগ। তাই কাঁটা পড়তে পারে একটি পা। এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ ও শেখ হাসিনাসহ দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইছি।”

বিভীষিকাময় ৫৩ দিন পর সাংবাদিক কাজলকে ২০২০ সালের ৩ মে রাতে যশোরের বেনাপোলের একটি খালে ফেলে রাখা হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগের এমপি সাইফুজ্জামান শেখরসহ আরও দুজনের করা তিনটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় কারাগারে থাকেন। পরে হাইকোর্ট থেকে ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর জামিন নিয়ে মুক্ত হন কাজল। জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার কারণে গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি।

এর আগে ২০২০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে থেকে কাজলকে গুম করা হয়। তারপর জম টুপি পরিয়ে মাটির নিচের কোনও অজ্ঞাত স্থানে তাকে নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, শফিকুল ইসলাম কাজল ফটো সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক বণিক বার্তা ও খবরের কাগজে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ‘পক্ষকাল’ নামে একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনার পাশাপাশি বিগত সরকারের নানা অনিয়ম নিয়ে ফেসবুকে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। বিশেষ করে পাপিয়া কেলেঙ্কারিতে জড়িত কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির তথ্য ও ছবি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন।

Link copied!