জুন ২৬, ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম
প্রবাসীদের জন্য সুখবর। বাংলাদেশে ল্যান্ড করার পর ভারী ভারী লাগেজ টেনে বিমানবন্দরের মেইন রাস্তায় আসা বা রাস্তার বিপরীত পাশে অবস্থানকারী বিমানবন্দর রেল স্টেশনে যাওয়ার ক্ষেত্রে আর চিন্তা নেই।
দূরের জেলায় যাত্রার জন্যে অনেকেই ট্রেন ভ্রমণ পছন্দ করেন। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে বিমানবন্দর বহির্গমন টার্মিনাল থেকে বিমানবন্দর রেলস্টেশন মাত্র ৮০০ মিটার দূরত্ব হলেও সিএনজি বা ট্যাক্সি ভাড়া হাঁকা হয় ১০০০-২০০০ টাকা। রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্ম উবার, পাঠাওতে রিকোয়েস্ট করলেও গাড়ি আসতে চায় না স্বল্প দূরত্বের কারণে। এছাড়াও প্রাইভেট কারগুলোতে তুলনামূলক বেশি লাগেজ নেওয়াও যায় না। আর প্রবাসীদের স্বাগত জানাতে আসা মানুষ থাকলে তো কথায় নেই। বড় ধরণের গাড়ি উবার -এ পাওয়া গেলেও সময়মত সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি এখনও।
অগত্যা কোনও প্রবাসী যদি বিমানবন্দরে নেমে লাগেজ টেনে এনে বিমানবন্দর মূল সড়কের সামনে এসে দাঁড়ায় তার আর বিমানবন্দর স্টেশনের মধ্যখানে একমাত্র বাধা হল এয়ারপোর্ট থেকে উত্তরাগামী বিশাল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। অসহায় প্রবাসী এই রাস্তাতো আর লাগেজ টেনে পার হতে পারবেন না! এছাড়া আছে ওভারব্রিজ। যার এস্কেলেটর ব্যবহার করেও লাগেজ পারাপার করা অনেক কষ্টদায়ক।
এমন অনেক প্রবাসী আছেন যাদের কষ্টে উপার্জিত অর্থ, দেশে এসে ফুরিয়ে ফেলতে হয় পানি অপচয় করার মত করে। দেশে নামার পর তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ করে অপচয় রোধ করতে এবং সর্বপরি দূরপাল্লার যানবাহনের নিকটে পোঁছে দিতেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিআরটিসি কে ব্যবহার করে শুরু করল শাটল বাস সার্ভিস।
দেশী ও বিদেশি পর্যটক এবং সাধারণ যাত্রীদের বিমানবন্দরে যাতায়াত ও লাগেজ সামগ্রী পরিবহনের সুবিধার্থে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২৬ জুন চালু করল এই এসি বাস সেবা।
শাটল বাস সেবার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনের পর থেকেই চলমান থাকবে পরিসেবাটি।
শুরুতে দুটি এসি শাটল বাস দেওয়া হয়েছে। প্রটিটি বাসে মোট ২৫ টি সিট রয়েছে। বাসের ভেতরে যাত্রীদের আলাদা লাগেজ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
বিমানবন্দর শাটল বাস সার্ভিস বিমানবন্দর টার্মিনাল-২ এর বাইরের চত্ত্বর থেকে বিমানবন্দর গোলচত্বর, উত্তরা জসীমউদ্দীন রোড ঘুরে, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন এ যাত্রী নামিয়ে, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ হয়ে আবার বিমানবন্দর গোলচত্বর ও বিমানবন্দর টার্মিনাল-২ এ পৌঁছাবে।
তার মানে, দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে কোনও প্রবাসী এসে বিমানবন্দর রেল স্টেশনে নামলে তিনিও খুব সহজেই বিমানবন্দর এ পৌঁছাতে পারবেন এই একই সাটল সার্ভিসে চেপে। সেই রেমিটেন্স যোদ্ধারও আর প্রয়োজন নেই ভারী ভারী লাগেজ নিয়ে সেই বিমান অফিসের কাছাকাছি জায়গায় মুল্লুক ঘুরে ইউটার্ন নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর।
ভাড়া কত?
চলুন এবার জেনে নেই এই দুঃসহ যাত্রাকে সহজ করা পরিবহনের ভাড়া কত। সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ’কে জানিয়েছেন যে কোনও স্টপেজের লাগেজ ছাড়া একক যাত্রার মাত্র ২০ টাকা। লাগেজ সহ ভাড়া ৫০ টাকা।
কোন বিদেশগামী যাত্রী চাইলে বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে শাটল বাসে উঠে এসে এয়ারপোর্টের থার্ড টার্মিনাল (৩য়) কিংবা ২য় টার্মিনালেও নামতে পারেন। এক্ষেত্রে সকলের স্ক্যানিং এর ব্যবস্থা আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তাজুল জানান সরকারি বাসের এই সার্ভিসে যাত্রীরা একেকজন মোট ৫০ কেজির লাগেজ নিয়ে উঠতে পারবেন।
কী কী আছে বিআরটিসি এসি বাসে?
বিআরটিসির কারিগরি দক্ষতায় তৈরি বিশেষ এই বাসটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। যাত্রীদের জন্য থাকছে পর্যাপ্ত লাগেজ পরিবহনের সুবিধা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিনামূল্যে ওয়াইফাই। প্রবীণ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বাসে ওঠা-নামার বিশেষ ব্যবস্থাও থাকছে।
গাজীপুরে অবস্থিত সমন্বিত কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় বিআরটিসি নিজস্ব কারিগরি দক্ষতায় প্রাথমিকভাবে এই ২টি বিশেষ শাটল বাসের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমরা এখন নিজেদের কারখানায়ই এসব গাড়ি প্রস্তুত করছি। অদূর ভবিষ্যতে আর আমাদের গাড়ি আমদানি করতে হবে না। আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারবো।”