জানুয়ারি ১৮, ২০২৪, ০৬:৪৬ পিএম
‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থায় (আইএমও) ‘সি’ ক্যাটাগরির কাউন্সিল নির্বাচিত হয়েছে। এতে বিশ্বে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। আমরা এ সম্পর্কিত একটি ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স’ করব। কূটনৈতিক রিলেশনশিপ বাড়াতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিপিং রিপোর্টার্স ফোরাম, বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধিদলের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় শিপিং রিপোর্টার্স ফোরাম, বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধিদল তাঁকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বপ্রাপ্তির বিষয়ে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসির কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারেন- সামনে কী করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কেউ এরকম ভাবেননি। প্রধানমন্ত্রী বাংলার মানুষের কাছে গর্বের জায়গায় চলে গেছেন। মানুষের বিশ্বাস তিনি পারবেন। আপাতত তিনি না পারলে আর কেউ পারবেন না। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে আমাকে পুনরায় দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় পরিষ্কার থাকতে চাই; তিনি যাতে বিব্রত না হন।
শিপিং রিপোর্টার্স ফোরামের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সাথে কথা বললে মূলচিত্র পাওয়া যায়। আমি সেখান থেকে জেনে জেনে বিভিন্ন সভায় অনেক কিছু উপস্থাপন করতে পারি।
পদ্মায় ফেরি দুর্ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর মূল বিষয়টি জানতে পারব। আমরা যে যার চেয়ারে বসে আছি। পেশাদারিত্বটাকে খুব গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নৈতিকতার বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা কথায় কথায় পশ্চিমা দেশের উদাহরণ দেই। আমাদের খুব কাছের মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করতে পারি। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন। নৈতিকতার জায়গায় তিনি স্ট্রং ছিলেন। এরকম স্ট্রং নৈতিকতা আর কার ছিল? বাঙালি বিজয়ী জাতি। নৈতিকতা স্ট্রং না থাকলে বিজয়ী হতে পারে? মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জীবনে তাঁর যে স্ট্রাগল, উঠানামা, জোয়ারভাটা- তিনি একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছেন। নীতি ও নৈতিকতা ঠিক থাকলে সবাইকে নিয়ে কিছু পাওয়া যায়। স্বাধীনতা-এটির জ্বলন্ত উদাহরণ।
খালিদ মাহমুদ আরও বলেন, আমাদের সব কিছু আছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এখানে এত নৌযান পরিবাহিত হয়। কী ধরনের জলযান তৈরি করব- সঠিক স্টাডি নাই। বড় ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্প নেই। এগুলোর ফিডব্যাক ভালো হয়নি। ছোট ছোট প্রকল্প নিয়ে আগানো যায়। বিভিন্ন স্থান অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিটেইল স্টাডি করে বিভিন্ন ঘাটের প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে কিভাবে ফেরি সংখ্যা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কথা বলেছি।
উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগের উন্নয়নেও কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, সন্দীপ, কুতুবদিয়া অঞ্চলের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। হাতিয়ার ব্যাপারে স্পেশাল অর্থের চেষ্টা করা হচ্ছে। খুলনা অঞ্চলের নদী নিয়ে কর্মশালা করেছি। বিআইডব্লিউটিএ খুলনা অঞ্চলের নদীগুলোর উন্নয়নে কাজ করছে । নোয়াপাড়া নদী বন্দরের উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। চিলমারী নদী বন্দরের উন্নয়ন করা হচ্ছে; সেখানে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
ঢাকার চারপাশের নদী নিয়েও পরিকল্পনা হচ্ছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী তীর রক্ষা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কাজ করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে যাতে সবকিছু হয় সে বিষয়ে কাজ করছি। টঙ্গীতে রেল ব্রিজের বিষয়ে আলোচনা করেছি। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় জরুরি প্রয়োজনে সেটি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যখন সক্ষমতা হবে- তখন এ বিষয়ে দেখা যাবে। ঢাকার চারপাশের লোহা-ইটের ব্রিজগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধি করা হবে।
নৌ প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ঢাকার চারপাশে বার্জ চালু করার বিষয়ে কাজ করছি। গোমতী সেতুর বিষয়ে কাজ করা হবে; যাতে সেটার নিচ দিয়ে বার্জ যেতে পারে। কেউ বার্জ তৈরির অনুমতি চাইলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার তথ্য দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো অসুবিধা নাই। নদী রক্ষায় জাতীয় নদীর রক্ষা কমিশন কাজ করছে। জেলা পর্যায়ে নদী রক্ষা সংক্রান্ত সবগুলো কমিটি হয়নি; সেগুলো হয়ে যাবে। উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করতে হবে।
নদী রক্ষায় সমাজে সচেতনতা তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদী রক্ষায় নাগরিকরা এগিয়ে এসেছে। রংপুর অঞ্চলে তিস্তা ও ঘাঘর নদী নিয়ে অনেক নাগরিক ও সংগঠন কাজ করছে। ঢাকা সদরঘাটে আমাদের ব্যস্ততার কারণে অনেকে দোকানপাট বসিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। আমরা ব্যবস্থা নিব। সদরঘাট ফিটফাট আছে, তেমনি ফিটফাট থাকবে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ অনুষ্ঠানে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- শিপিং রিপোর্টার্স ফোরাম, বাংলাদেশ এর সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দিন জেবেল, সাধারণ সম্পাদক আফরিন জাহান, সদস্য তোফাজ্জল হোসেন, শফিকুল ইসলাম, রাশেদ আলী, ফারুক খান, রাশিম মোল্লা, শামছুল ইসলাম, তাওহীদুল ইসলাম, মাহমুদ আকাশ, তরিকুল ইসলাম সুমন, গাজী শাহনেওয়াজ, আকতার হোসেন, রতন বালো, মেসবাহ উল্লাহ শিমুল, ইসমাইল হোসেন, মাসুদ রানা, শফিকুল ইসলাম সবুজ, হাবিব রহমান।