অক্টোবর ১৭, ২০২৪, ০৮:১৮ এএম
উচ্চ আদালতের ১২ জন বিচারপতিতে আপাতত বিচারিক দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি দেওয়া যথাযথ হয়নি বলে মনে করছেন দেশের বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা। যে প্রক্রিয়ায় বিচারকদের পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করা হচ্ছে, তাও শৃঙ্খলাবহির্ভূত বলে মনে করছেন তারা।
বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের `চায়ের দাওয়াত` পাওয়া ১২ বিচারপতি আপাতত তারা কোনো বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা।
ওইদিন দুপুরে ‘আওয়ামী লীগপন্থি ফ্যাসিস্ট বিচারকদের’পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাইকোর্ট ঘেরাও করে। এরপরই ১২ বিচারপতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান রেজিস্ট্রার জেনারেল।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করেন, যে প্রক্রিয়ায় বিচারকদের পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করা হচ্ছে, তা শৃঙ্খলাবহির্ভূত।
দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, এটা নৈরাজ্যকর অবস্থা। কোনো বিচারপতি বা কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটি লিখিতভাবে জানাতে প্রধান বিচারপতি একটি হটলাইন সেবা চালু করেছেন। এর ব্যবহার না করে পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে চাপ প্রয়োগের প্রবণতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোনো বিচারপতিই হয়তো এ থেকে রেহাই পাবেন না।
আর পদত্যাগের দাবির মুখে বিচারকাজ থেকে অপসারিত করা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মূলে কুঠারাঘাতের শামিল বলে করছেন আরেক বিশেষজ্ঞ আইনজীবী শাহদীন মালিক।
তিনি বলেছেন, বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত এবং সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের একটি প্রক্রিয়া সংবিধানে বলে দেওয়া আছে। কয়েকজন বিচারককে বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়নি, সার্বিকভাবে এ ঘটনাগুলো খুবই বেদনাদায়ক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন: আইনজ্ঞদের মত: এভাবে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা যথাযথ নয়
গত আট আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান করা হয়েছিল শাহদীন মালিককে। পরে তাকে সরিয়ে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অধ্যাপক আলী রিয়াজকে।
বিচারপতিদের কাজ থেকে বিরত রাখার বিষয়ে শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেছেন, কোনো কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও অযোগ্যতা এমনকি দুর্নীতির অভিযোগ থাকতেও পারে। তার অর্থ যদি এই নয় যে, এসব অভিযোগের কারণে বিচারপতিরা জিম্মি হয়ে যাবেন, বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে অপসারিত হবেন। বিচারকদের রাগ, অনুরাগ ও বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচার করা দুরূহ হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: আপাতত বিচারিক দায়িত্বে থাকছেন না ১২ বিচারপতি
সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মনে করেন, চাপ প্রয়োগের প্রক্রিয়া অশোভন। বলেছেন, এগুলো পরিহার করা উচিত। দুদিন পরপর শিক্ষার্থীরা এসে দাবি জানাতে থাকবে এবং এটার পরিপ্রেক্ষিতে একটা অ্যাকশন হবে, এর কোনোটাই ঠিক নয়।
‘এতে বিচার বিভাগের শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর আগেও যেভাবে হয়েছিল, ছয়জন আপিল বিভাগের বিচারপতির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটাও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হয়নি,’ যোগ করেন এই আইনজীবী।