বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে জনমুখী করে তুলতে সহযোগিতা করবে সুইডেন ও ইউএনডিপি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৩, ২০২৫, ০৬:৪৬ পিএম

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে জনমুখী করে তুলতে সহযোগিতা করবে সুইডেন ও ইউএনডিপি

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে সুইডেন দূতাবাস ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)২২ জুন ২০২৫ এ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে দেশে চলমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে তাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ঢাকায় আয়োজিত আজকের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সুইডেন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মারিয়া স্ট্রিডসম্যান এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার এই চলমান প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের মহামান্য প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সহ সুপ্রিম কোর্ট এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ।

এই চুক্তির আওতায় সুইডেন “সাপোর্ট টু ট্রান্সফরমিং বাংলাদেশ’স রুল অফ ল সার্ভিসেস” বা বাংলাদেশের আইনের শাসন পরিষেবা রূপান্তরে সহায়তা প্রকল্পে দ্বিতীয় দফায় ৫ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা অনুদান দেবে। এর মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে বিস্তর কাজ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগটি ইউএনডিপির “ইন্টিগ্রেটেড সাপোর্ট ফর অ্যাডভান্সিং রিফর্মস অ্যান্ড ডেমোক্রেটিক গভর্নেন্স” অর্থাৎ সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অগ্রগতির জন্য সমন্বিত সহায়তা কার্যক্রমের অংশ।

নতুন এই ধাপে প্রকল্পের পূর্ববর্তী অগ্রগতির ভিত্তিতে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, প্রসিকিউশন সংস্কার এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার- বিশেষ করে নারী, যুবসমাজ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর, এসব দিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিচারপ্রার্থীদের জন্য চালু হওয়া সুপ্রিম কোর্টের নতুন হটলাইন পরিষেবাকে আরও কার্যকর করা হবে এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে একটি পেশাদার প্রসিকিউশন সার্ভিসে রূপান্তরিত করার সাথে সাথে অন্যান্য সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মারিয়া স্ট্রিডসম্যান বলেন, “গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন জোরদার করার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন করতে সুইডেন আবারও দৃঢ় অঙ্গীকার প্রকাশ করছে। ন্যায়বিচারে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা বিচার খাত সংস্কারের মূল ভিত্তি। সুইডেন গর্বিত যে, ইউএনডিপির সাথে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তারা একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে- এমন একটি বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলায় সহায়তা করতে পারছে, যা সকল নাগরিকের সেবা ও মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখে।”

স্টেফান লিলার বলেন, “বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বিচার ব্যবস্থার সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া কেবল একটি মৌলিক প্রয়োজনই নয়, সেই সাথে এটি ২০২৪ সালে অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণদের অভূতপূর্ব বিদ্রোহের স্বীকৃতিস্বরুপ তাদের জন্য একটি প্রতিশ্রুতি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ তৈরি করছে।”

তিনি আরও বলেন, “নিম্ন আদালতসহ বিচার বিভাগের সকল পর্যায়ের বিচারিক কার্যক্রমের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিস্থিতি আর প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরিতে সরকার এবং বিচার বিভাগকে সহায়তা করবে ইউএনডিপি। বিচারকরা যেন কার্যকরী স্বাধীনতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকেন তার ব্যবস্থা একই সাথে বিচার বিভাগের নিজস্ব প্রশাসনের নিয়মকানুন তৈরির কাজেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

প্রকল্পটি বিচার বিভাগে ডিজিটালাইজেশন জোরদার করা নিয়ে কাজ করবে যাতে সকলের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার আরও ভালো সুযোগ তৈরি হয়। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মান ও নিয়মের সাথে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের সমন্বয় সাধন করা এবং ন্যায়বিচারের প্রতি জনসচেতনতা ও আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বিস্তর প্রচারণার কাজ করা হবে। আইনি পর্যালোচনা এবং নারী অধিকার সংগঠনের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল সংস্কারগুলি এগিয়ে নেওয়া হবে। এই উদ্যোগে নাগরিক, যুবসমাজ, আইনজীবী ও গণমাধ্যমের সক্রিয় অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হবে, যাতে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী হয়। সুইডেন-ইউএনডিপির এই চুক্তি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬- শান্তি, ন্যায়বিচার এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান অর্জনে অবদান রাখবে।

Link copied!