বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, দুর্নীতি ও ২১শে আগস্ট হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তারেক রহমানকে অনতিবিলম্বে, কান ধরে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে হবে। তাহলেই এই সকল হত্যার রাজনীতি থেকে এই দেশ চিরতরে মুক্তি পাবে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের উদ্যোগে “১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টে শহীদদের স্মরণে” আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই আগস্ট মাসে বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপর; চালানো হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ড ছিল সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার সূর্য সম্পূর্ণরূপে উদিত হওয়ার পূর্বেই আকষ্মিকভাবে অস্তমিত করা হয়েছিল। নস্যাৎ করা হয়েছিল বাঙালির দুই শতাধিক বছরের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শত্রুরা প্রতিশোধ নিয়েছিল বাঙালি জাতির উপর।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যা কোন সাধারণ হত্যাকাণ্ড না। এই মহান নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল একাধিক অশুভ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি; দ্বিতীয়ত, তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করা মেনে নিতে পারেনি; তারা পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক সংবিধান প্রত্যাখান করে বাংলাদেশের জন্য একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রণয়ন মেনে নিতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের কয়েকজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু অভিযুক্তদের কেউ কেউ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকায় বিচারের রায় আংশিক কার্যকর হয়। তাই আজকে যুবসমাজের দাবি বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
যুবলীগ আরও দাবি করছে যে ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের লক্ষ্যে একটা জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে ঐ ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোস উন্মোচন করতে হবে। এই জাতীয় কমিশনই হবে জিয়ার মরণোত্তর বিচারের সর্বপ্রথম ধাপ এবং প্রারম্ভিক পদক্ষেপ। তাই এই কমিশন গঠন করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্রজন্মের সময়ের দাবি। যতদিন তদন্ত কমিশনের ফলাফল না বের হবে, খুনিরা পর্দার অন্তরালে থেকে যাবে এবং এই বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতির ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ২১শে আগস্ট এদেশের রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি ধ্বংসের পিছনে এককভাবে দায়ী। কি বর্বর এবং অসহিষ্ণু ওদের রাজনৈতিক মনোবৃত্তি যে বিরোধী মতামত তো দুরের কথা, পুরো দলটাকেই ওরা সাংগঠনিক ভাবে নির্মূল করে দিতে চেয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আজকেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী, তারেক জিয়া বিদেশ থেকে হুকুম দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। তারেক জিয়ার মত একজন কাপুরুষের নেতৃত্বের কারণে বিএনপি আজ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ইতিহাসের আস্তাকুরে নিক্ষেপ হতে চলেছে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জিয়ার খুনি পুত্র তারেক জিয়ার নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালায় বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা। সেই হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারায়। সন্ত্রাসী তারেকের নেতৃত্বে এদেশে অস্ত্রের ঝনঝনানী শুরু হয়েছিল। তারই প্রত্যক্ষ মদদে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামাত বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। মানুষকে হত্যা করেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারও তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। তারেকের নির্দেশে রমনার বটমূলে, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে বোমা হামলা চালিয়েছিল।
দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল তারেক জিয়া। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে র্বথ রাষ্ট্রে পরিণত করা। সেই বিএনপি-জামাত আবারও বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, দেশের উন্নয়নকে ব্যহত করতে আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে। এই জামাতকে প্রতিহত করতে যুবলীগই যথেষ্ট। যদি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামে তাহলে বিএনপি-জামাত পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।
ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানার সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায়েএ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।