সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফ শুধু কলেজ ক্যাম্পাস বা শ্রেণিকক্ষেই পিস্তল প্রদর্শন করতেন না, চলার পথের যানবহন ও পূর্বের কর্মস্থলেও পিস্তল প্রদর্শন করতেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাতে তার পিস্তল প্রদর্শনের এমন একটি ছবি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। ওই ছবিতে দেখা যায় শিক্ষক রায়হান শরীফ বাসের একটি আসনের যাত্রীর দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছেন। তবে ছবিটি কবে ও কোথা থেকে তোলা হয়েছে সেটা জানা যায়নি।
রায়হান শরীফ তাঁর সাবেক কর্মস্থল নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন জ্যেষ্ঠ সহকর্মীকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে। বর্তমান কর্মস্থলে এসেও কথায় কথায় পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেওয়া ছাড়েননি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। মৌখিক অভিযোগ পেয়ে তাঁকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি জবাব দেননি বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী। অধ্যক্ষের দাবি, প্রভাব খাটানোর কারণে রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে এত দিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, এক বছর দুই মাস আগে মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদানের পর থেকেই পিস্তল ঠেকিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি, শ্রেণিকক্ষে পিস্তল প্রদর্শন, ছাত্রীদের অশ্লীল ইঙ্গিতসহ নানা অপকর্ম করতে থাকেন। শ্রেণিকক্ষে পিস্তল উঁচিয়ে ভয় দেখানোর ভিডিও ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রায়হান শরীফ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখানে তিনি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন বলে কলেজ সূত্রে জানা গেছে।
এই কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সিরাজগঞ্জ শাখার সভাপতি জহুরুল হক বলেন, রায়হান কর্মরত থাকাকালে প্রায়ই অস্ত্র উঁচিয়ে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করতেন। হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান লিয়াকত আলীকে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ায় তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানিয়েছে, আহত শিক্ষার্থীর আঘাত তেমন গুরুতর নয়। গুলিটি লেগেছে ওই শিক্ষার্থীর প্যান্টের পকেটের কাছে। সেখানে তাঁর মুঠোফোন ছিল। গুলিটি আগে মুঠোফোনে লাগে, সেটি ভেদ করে আঘাত লাগে।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, রায়হান শরীফ জামিনে মুক্ত হয়ে আবার কলেজে ফিরে আসেন কি না, সেই আতঙ্কে আছেন শিক্ষার্থীরা। একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁকে চাকরিচ্যুত করার জন্য বিধি মোতাবেক সুপারিশ করা হবে।