সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার জের ধরে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে জেলা সদর, সদর উপজেলা পৌর এলাকা এবং গুইমারা উপজেলায় টানা তৃতীয় দিনের মত ১৪৪ ধারা চলছে।
রোববার সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকে নতুন করে গোলযোগের কোনো খবর না এলেও গুইমারা উপজেলায় বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি।
সোমবার দুপুর থেকে অবরোধ শিথিল হওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলার সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
তবে জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকা অবরোধে রাঙামাটির সঙ্গে যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙাসহ নয় উপজেলার সঙ্গেও জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। এসব পথে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করছে না।
অবরোধের কারণে তিন দিন ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পরেছে সাধারণ মানুষ। সাজেকে আটকে পরা ৫১৮ জন পর্যটককে সেনা নিরাপত্তা সাজেক থেকে খাগড়াছড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। সোমবার দুপুরে তারা খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছান।
খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, শাপলা চত্বর, কলেজ গেইট, স্বনির্ভর, জিরো মাইলে চেকপোস্ট বসিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ১৪৪ ধারার মধ্যে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়িতে চলমান এ উত্তেজনা শুরু হয় বুধবার; আগের দিন রাতে ‘অচেতন অবস্থায়’ ক্ষেত থেকে এক মারমা কিশোরীকে উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
মঙ্গলবার রাতেই ওই কিশোরীর বাবা ধর্ষণের অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন ভোরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর মধ্যে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় খাগড়াছড়িতে। এই আন্দোলন এক সময় সহিংস হয়ে ওঠে।
১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি অতিরিক্ত সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে।
রোববার ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেখানে গুলিতে নিহত হয় তিনজন।
তারা হলেন— গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের রামসু বাজার এলাকার আলাকাই মারমার ছেলে তৈইচিং মারমা (২০), আমতলী পাড়ার থুহলাঅং মারমার ছেলে আথুইপ্রু মারমা (২১) ও চেং গুলি পাড়ার হাসু মারমার ছেলে আখ্রাউ মারমা (২২)।
রোববারের সংঘাতে সেনাবাহিনীর একজন মেজরসহ ১৬ সদস্য এবং গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন আহত হন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব পলাশ বলেছেন, নিহতদের ময়নাতদন্ত ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদ বলেন, “গতকাল রোববার থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে। এরমধ্যে একজনকে গতকাল রাতে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে ১৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন।”
গুইমারা থানার ওসি মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সোমবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইন-আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চলছে।
“পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোথাও পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।”