সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বেড়েছে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩, ০২:৩৮ এএম

সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বেড়েছে

সুন্দরবনে এখন আগের তুলনায় বাঘের দেখা বেশি মিলছে। বনে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক এবং বনে থাকা বনকর্মীরা প্রায়ই বাঘ দেখতে পাচ্ছেন। বাঘশুমারির জন্য স্থাপন করা ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে কয়েকটি স্থানে বাঘের সঙ্গে এবার শাবকের ছবিও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। বনে আগের তুলনায় বাঘের প্রজনন বেড়েছে, সেই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে বলে জানিয়েছেন বাঘ গবেষকরা ও বন বিভাগ। ফলে এবারের জরিপে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছেন তারা।

তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ১ সেপ্টেম্বর পর্যটকদের জন্য খোলা দেওয়া হয় সুন্দরবন। এরপর দিন সুন্দরবনে বাঘের দেখা পায় পর্যটকরা। শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী এলাকার নদী সাঁতরে একটি বাঘ পার হতে দেখেন ক্রাউন নামের জলযানে সুন্দরবনে যাওয়া পর্যটকরা।

৩ সেপ্টেম্বর সকালে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা এলাকায় সাঁতরে একটি বাঘকে নদী পার হতে দেখার দুর্লভ সুযোগ পান সাম্পান নামের আরেক জাহাজের পর্যটকরা। একই দিন দুপুরে শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের কাছে আলীবান্দা এলাকায় আরেকটি বাঘকে নদী সাঁতরে পার হতে দেখেন বনরক্ষীরা।

এর আগে গত ৮ আগস্ট সকালে শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্র অফিসের সামনে দেখা মিলেছিল বাঘের। বাঘটি বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে। 

গতবছরও এসব পয়েন্টে বাঘের দেখা পেয়েছিল বন কর্মী ও পর্যটকরা। তবে তা ছিল এবছরের তুলনায় সংখ্যায় কম।

৯০ দিন বনে পর্যটক ও জেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় বাঘ চলাফেরায় সংকোচ করেনি। সে কারণে পর্যটক প্রবেশ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা বাঘ দেখতে পাচ্ছেন। হয়তো সপ্তাহখানেকের মধ্যে বাঘ যখন পর্যটক-জেলেদের আনাগোনা দেখবে তখন বনের গহিনে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেন সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মো. মহসিন হোসেন।

তিনি বলেন, আগে বাঘের বাচ্চা কম দেখা যেত। এখন বাঘের প্রজনন বেড়েছে। আগে বাঘের বাচ্চার মৃত্যুহার বেশি ছিল। বিভিন্ন কারণে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাচ্চা মারা যেত। সে মৃত্যুহারও কমেছে। সে কারণে এখন বাঘ দেখা যাচ্ছে বেশি।

বনসংলগ্ন এলাকার লোকজন জানান, আগের তুলনায় খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে বাঘ আসার প্রবণতা কমেছে। সে কারণে পিটিয়ে বাঘ হত্যার ঘটনাও কম। এ ছাড়া র‍্যাবের তৎপরতার কারণে সুন্দরবনে বনদস্যু ও বাঘ শিকারিদের তৎপরতা আগের তুলনায় কম। সে কারণে হয়তো বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তাদের  ধারণা।

গত চার মাস ধরে সুন্দরবনে চলছে বাঘ গণনার কাজ। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে কার্যকরী গণনার উপায় ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে চলছে এই প্রকল্প ।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর আওতায় সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার কাজও করা হবে। এর মধ্যে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে বাঘ গণনায়। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। তবে ২০২৪ সালে বাঘ গণনার কার্যক্রম শেষ করা হবে। এরপর শুরু হবে অন্যান্য কাজ।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। ১৯৮২ সালের জরিপে দেখা যায় বাঘের সংখ্যা ৪২৫টি। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবনের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি, ২০০৪ সালের জরিপে ৪৪০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ২০১৫ সালে ‍‍`ক্যামেরা ট্র্যাকিং‍‍` পদ্ধতিতে পরিচালিত জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছে ১০৬টি। ২০১৮ সালে করা একটি জরিপের ফলাফলে বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি।

Link copied!