নারায়ণগঞ্জে ইউপি সদস্যকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

নারায়ণগঞ্জে ইউপি সদস্যকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা

ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক ইউপি সদস্যকে হাত-পা বেঁধে গ্রামবাসী পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন।

নিহত মো. সোহেল (৩৮) একই গ্রামের প্রয়াত মকবুল হোসেনের ছেলে এবং ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে বালিয়াপাড়া বটতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে সোহেলের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিল এবং মুখ থেতলে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের বরাতে ওসি বলেন, বালিয়াপাড়ায় একটি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। সোমবার সকালে ওই মার্কেটের মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দা শরীফ হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করেন সোহেল।

পরে শরীফ হোসেনের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সোহেলের বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় তারা গ্রামবাসীকে জড়ো করে সোহেলকে আটক করেন। 

“নিহত মো. সোহেল ওরফে সোহেল মেম্বার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তাই তার উপর গ্রামবাসী খুবই ক্ষুব্দ ছিল। ওই ক্ষোভের জেরেই গ্রামবাসী সকলে মিলে তাকে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে”, যোগ করেন ওসি।

তবে চাঁদাবাজির এই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সোহেলের পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করায় পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

সোহেলের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জান্নাত আক্তার চৈতি বলেন, সকাল সাতটার দিকে সোহেল একজনের ফোন পেয়ে বেরিয়ে যান। ঘণ্টা দেড়েক পরেই তার মৃত্যুর খবর পান তারা।

“তার বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হচ্ছে এইগুলা সব মিথ্যা। এলাকার কিছু মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করছিলেন সোহেল ভাই, এই কারণেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”

সোহেল মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তার স্ত্রী, তাই তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে মার্কেটের মালিক শরীফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও সেটির সংযোগ পাওয়া যায়নি।

তবে স্থানীয়রা জানান, সোহেল এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য পদও ছিল তার।

তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠ অনুসারী, কিন্তু পরে এ সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তার জের ধরে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সোহেলের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

সে সময় সোহেল এই ঘটনার জন্য স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অভিযুক্ত করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালিয়াপাড়া গ্রামের অন্তত দুইজন বাসিন্দা বলেন, গত বছরের অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও পরে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন সোহেল।

সে সখ্যতার জেরে গত কয়েক মাসে এলাকায় ছিল তার অবাধ বিচরণ। তার বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার কারণে গ্রামবাসী ক্ষুব্দ হয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর ফের তার বাড়িতে আগুন দেয়।

আগুনের এ ঘটনার কথা স্বীকার করলেও এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানান আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন।

ওসি বলেন, সোহেলের বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। গত ১৩ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় র‌্যাব-১১ এর এক অভিযানে গ্রেপ্তারও হন তিনি। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

ময়নাতদন্তের জন্য সোহেলের মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং এ ঘটনায় থানায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এ নিয়ে চলতি মাসেই ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের দুটি পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটল। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে প্রভারকরদী গ্রামের বাসিন্দা মো. আয়নাল হোসেনকে তার বাড়ির ১০০ গজের মধ্যেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

৪২ বছর বয়সী আয়নালের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ধর্ষণসহ অন্তত আটটি মামলা ছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

Link copied!