অগ্নিঝরা মার্চ ৫: টঙ্গীতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত ৪

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৫, ২০২২, ০৩:০২ পিএম

অগ্নিঝরা মার্চ ৫: টঙ্গীতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত ৪

আজ ঐতিহাসিক ও অগ্নিঝরা মার্চ মাসের ৫ম দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশজুড়ে চলছিল মিছিল-মিটিং-বিক্ষোভ। এদিন ৫ম দিনের মতো হরতাল ও বিক্ষোভ চলাকালে শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত টঙ্গীতে ৪ শ্রমিক মারা যান। অহত হন ২৫ জনের বেশি।

টঙ্গীতে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ঢাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার ঘোষণা দেয়, আজ ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে হরতালের মধ্যেই ব্যাংক খোলা থাকে। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরেও দেশের পূর্বাঞ্চলের সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহীদদের গায়েবানা জানাজা হয় এবং বিভিন্ন মসজিদে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এদিন. পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো রাওয়ালপিণ্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে পিপিপি পার্টির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা মন্তব্য করেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাবেই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়।

এদিন বিকেলে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান করাচি থেকে ঢাকায় এসে রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ধানমণ্ডির বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশি বেতারে প্রচারিত ‘শেখ মুজিব, ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে রাজি আছেন’ এ সংক্রান্ত সংবাদকে ‘অসদুদ্দেশ্যমূলক’ ও ‘কল্পনার ফানুস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকার আন্দোলনের আহবানে সাড়া দিয়ে বিকালে কবি-সাহিত্যিক ও শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের হয়।

এদিন, ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি রিলে করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহবান জানান। রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ বিবৃতিতে বলেছেন, ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে সেনা সদস্যদের বুলেটে নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। এভাবে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক এবং স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পর নড়েচড়ে বসে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী। ৫ মার্চ সারা দেশ থেকে মুক্তিকামী জনতার ওপর পাকিস্তানি  পুলিশ বাহিনীর গুলিবর্ষণের খবরের সাথে মৃত্যুর খবরও আসথে থাকে। তারপরও মুক্তিকামী জনতাকে প্রতিরোধে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান সরকার।

Link copied!