২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে চাপাতির কোপে প্রাণ হারান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়। ওই সময় আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও। সেদিন রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের পরদিনই শাহবাগ থানায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরমধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মারা গেছেন অভিজিতের শিক্ষাবিদ বাবা অধ্যাপক অজয় রায়। ছেলের হত্যার বিচার তিনি আর দেখে যেতে পারলেন না।
অভিজিৎ হত্যা মালার রায় পেতে ৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আজ। সেই মামলার রায় আজ দুপুরে ঘোষণা করা হবে। বেলা ১২ টার দিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করবেন।
এ রায়ে মামলার ছয় আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যের (এবিটি) মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
বরখাস্তকৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ছয় আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির। রাষ্ট্রপক্ষের এ কৌঁসুলি বলেন, ‘ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে। রায়ে ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি।’
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তারা খালাস পাবেন বলে আশা করছেন।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। পরে আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।
১১ এপ্রিল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করেন। ১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। মামলায় ৩৪জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ২৮ জন সাক্ষ্য দেন।
মামলার আসামিরা হলে- মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির, মো. আরাফাত রহমান ও শফিউর রহমান ফারাবি। এদের মধ্যে মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির শুরু থেকে পলাতক রয়েছে।