মাঠ আছে কিন্তু খেলাধুলা নেই। সবুজ জমিন আছে কিন্তু সেখানে শিশুদের উচ্ছ্বল বিচরণ নেই। এর বদলে আছে চায়ের দোকান, রিকশার গ্যারেজ, এমনকি গোয়ালঘরও! সুবিশাল মাঠের অর্ধেকটা এখন বেদখলে চলে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বেদখল করে রেখেছেন মাঠের এই জমি। খোদ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া সংলগ্ন হাজীপাড়া খেলার মাঠের আজ এমন দশা।
স্থানীয়রা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার কারণে পুরোপুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে মূল্যবান মাঠটি। অথচ এই ঢাকা শহরে একটু দম ফেলবার জন্য এরকম মাঠের জন্য কত না হাহাকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২২ বিঘা জমির এই মাঠটির ১০-১২ বিঘা এরইমধ্যে বেদখল করে গড়ে ওঠেছে রিকশার গ্যারেজ, গোয়ালঘর, চায়ের দোকান, খাবার হোটেল, ভাঙারির দোকান, ক্লাবঘর ও বস্তিঘর। প্রতি মাসে এ সকল স্থাপনা থেকে কয়েক লাখ টাকার চাঁদা ওঠানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১২ বছরে দখলদারদের পকেটে ঢুকেছে কোটি কোটি টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই জায়গাটি আগে একটি ডোবা ছিলো। ২০০৫ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এটি খেলার মাঠ এবং ঈদগাহের জন্য বরাদ্দ দেয়। বিশেষ প্রকল্পের আওতায় এখানে বালু ফেলে জায়গাটি উঁচু করা হয়। তারপর থেকে স্থানীয়রা এখানে খেলাধুলা করে আসছে। হাজীপাড়া বালুর মাঠ নামে এর পরিচিতি তৈরি হয়। কিন্তু কোন ধরনের সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয়নি মাঠটিতে। যার ফলে ২০১০ সাল থেকেই ধীরে ধীরে বেদখল হয়ে যায় মাঠটির অর্ধেকেরও বেশি জায়গা।
মাঠে সব সময় খেলাধূলা করতেন তরুন রনি আহমেদ। নিজের চোখের সামনেই বেদখল হতে দেখেছেন মাঠটিকে। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, এই মাঠে আমরা একসময় খেলাধুলা করেছি। তখন কাজও চলতো খেলাধুলাও করা যেতো। যখন কাজ বন্ধ হয়ে গেলো তখনও আমরা খেলাধুলা করেছি। এখন এই মাঠটা একটা নর্দমায় পরিণত হয়েছে। এখানে সবাই ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এই অবস্থা দেখে আসছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠটির পূর্ব পাশে যেনো একটি ময়লার ভাগাড়। ময়লা-আবর্জনার স্তুপ রয়েছে ঐ জায়গায়। সে দিক দিয়ে একটু সামনে আগালেই একটি ঘরে দুইজন রান্নাবান্না করছে। কিসের রান্নাবান্না চলছে জানতে চাইলে ওইখানকার একজন বলেন, সামনের হোটেলের রান্না করা হয় এখনে। অন্যদিকে মাঠটির পশ্চিম পাশে দেখা যায় কয়েকটি গরু বাঁধা। পাশেই রয়েছে গোয়ালঘর। আর এর দক্ষিণ পাশেই রয়েছে ইকরা মাদ্রাসার দেয়াল। উত্তর পাশে রয়েছে কয়েকটি চায়ের দোকান।
ইকরা মাদরাসার দেয়াল ঘেষেই রয়েছে আটটি রিকশার গ্যারেজ। সেগুলোর একটির মালিক নুর ইসলাম। কিভাবে তিনি রিক্সার গ্যারেজ দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “আমি বছর ৫ এক আগে এখানে রিকশার গ্যারেজ দিয়েছি। আমি কাউকে কোনো টাকা দিই না। তবে রামপুরা থানার পুলিশকে চা-পানির জন্য কিছু টাকা দেয়া লাগে। দোকানপ্রতি ৫০-১০০ করে টাকা নেয় তারা।”
তবে টাকা নেয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “ওইখানে মাদকাসক্তের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় আমরা সেখানে কমিউনিটি পুলিশ বসাই। যদি কারো বিরুদ্ধে অবৈধ দখল কিংবা চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকে তবে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
হাজীপাড়া মাঠটি দখলমুক্ত করে খেলার উপযোগী করতে দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। হাজীপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা কামাল আহমেদ দুলু দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ”মাঠটি দখলমুক্ত করে খেলার উপযোগী করার জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু গণপূর্ত কিংবা সিটি করপোরেশন কেউই পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না”।
এ বিষয় ডিএনসিসির ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাখাওয়াত হোসেন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “আমরা বার বার গণপূর্তকে চিঠি দিয়েছি মাঠটি আমাদের বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু এখনো তারা আমাদের মাঠটি বুঝিয়ে দেয় নেই। তবে গণপূর্ত থেকে বলা হয়েছে মাঠটি দ্রুত সংস্কার করা হবে।”
দ্রুত মাঠের সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানান গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “জায়গাটিতে খেলার মাঠ ও ঈদগাঁহ করার বিষয়ে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন হলে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। মাঠের কোনো অংশ দখল হলে সেটাও উদ্ধার করা হবে।”