জুন ২৫, ২০২২, ১০:৫৪ এএম
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ভাষণ শেষ হওয়ার পরই পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন। মাওয়া পয়েন্টে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার কয়েক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু শুধু দেশের আত্মনির্ভরশীলতা বা আত্মমর্যাদাই বৃদ্ধি করেনি বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে এসেছে এক অনন্য উচ্চতায়।
প্রায় ২২ বছর আগে ২০০১ সালের ৪ জুলাই বাংলাদেশের এ যাবতকালের সবচেয়ে বৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ওই সময়ের ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন পদ্মা সেতুর। পদ্মা সেতুর অবকাঠামো, ভিত্তি প্রস্থর এবং উদ্বোধনী ফলক বিভিন্ন মেয়াদে ও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনের স্মৃতি বহন করবে।
শেখ হাসিনা দুই দশক আগে পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ওই সময় দেশের বৃহত্তম এ সেতু বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় নির্মাণ করা হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। তখন শেখ হাসিনা সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রেক্ষিতে সম্ভাব্য দাতা সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তবে বিশ্বব্যাংকসহ অর্থলগ্নীকারি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সরে গেলে পদ্মা সেতুর নির্মাণ চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ে।
তবে বিভিন্ন বাধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পুরোপুরি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তার এই সাহসিকতাপূর্ণ পদক্ষেপ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার কোটি কোটি মানুষের জন্য আশির্বাদ।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্লেষকদের ধারণা, পদ্মা সেতুর বদৌলতে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গ হবে মিনি সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে। সড়ক মহাসড়কগুলির আধুনিকায়ন হওয়ার পাশপাশি রাজধানী ঢাকার সাথে এ অঞ্চলের নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সেতুর মাধ্যমে খুব দ্রুত, কম খরচ এবং আয়েসে পদ্মার উভয় পারের জেলাগুলোতে ভ্রমণ করা যাবে।
৬ দশমিক১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মূল সেতুর পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করে পদ্মা সেতুর কাঠামো। এরপর একে একে সব ধাপ পেরিয়ে পদ্মার বুকে ৪২টি পিলারের ওপর দৃশ্যমান হয়ে ওঠে স্বপ্নের সেতু।