মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশের পর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও আজও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দর ও দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর চালু হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। স্থলবন্দরে উন্নীত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলায় বছরের পর বছর ধরে থমকে আছে সব কার্যক্রম। তবে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো.আলমগীর আসছে দুই বছরের মধ্যে দর্শনা স্থলবন্দর চালু হওয়ার আশার কথা শুনিয়েছেন। খবর ইউএনবি’র।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি সহজতর করার জন্য দর্শনা এবং দৌলতগঞ্জ স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোকে যথাক্রমে ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি এবং ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবে বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও এ দুটি স্থলবন্দর চালু হয়নি।
বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আংশিকভাবে রেলপথে দর্শনা শুল্ক স্টেশন দিয়ে করা হয়। তবে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন এখনও অনেক দূরের কথা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে,এ দুটি স্থলবন্দর চালু হলে ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার কমে যাবে। বেনাপোল স্থলবন্দরের তুলনায় এ দুটি স্থলবন্দর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের সময়ও ২-৩ ঘণ্টা কমিয়ে দেবে।
দূরত্ব ও সময় কমলে এ দুই বন্দর দিয়ে সহজে, দ্রুত এবং অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবে। ফলে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের তুলনায় সরকার বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে।
দর্শনা ও দৌলতগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে, এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে, ঠিক তেমনি আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, বন্দর দুটি চালু হলে জেলার ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
তিনি বলেন, “বন্দর চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগ্রত হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসবেন এখান দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য। পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।”
দর্শনা স্থলবন্দর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর মহকুমার অন্তর্গত গেঁদে সীমান্ত বন্দরের বিপরীতে দর্শনা সীমান্তে অবস্থিত। এই বন্দরের রুট হল দর্শনা-গেঁদে রেল সংযোগ ও সড়ক।
ঢাকা থেকে দর্শনা স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২৫৮ কিলোমিটার। এই স্থলবন্দরটি সড়ক ও রেলপথে ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত। তাই বন্দরটি চালু হলে এ বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো.আলমগীর চলতি বছরের ২২ মার্চ দর্শনা স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন।
বন্দর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে দর্শনা বন্দর পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
মো.আলমগীর আরও বলেন, “যখনই আমরা এখানে আসি, আমরা ভারতীয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। তারা জানতে চায় বন্দর চালু করতে আমরা কতটা অগ্রগতি করেছি। আমরা ২০০৪ সালে এই বন্দরের অনুমোদনের চিঠি পেয়েছি। তারপর থেকে আমরা ভারত ও বাংলাদেশের উভয় পক্ষের মতামত নেয়ার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছি।”
২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দর্শনা- গেঁদে বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন ভারতের ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ও বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি এন এন সিনহা। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও সেসময় বন্দর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
পরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি দল স্থলবন্দরের জন্য ৪৫০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এ জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে হলে ট্রাক টার্মিনাল, রেলইয়ার্ড শেড, ওয়ার হাউজ, আবাসিক এলাকাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
সূত্র: ইউএনবি