আগামী ৭ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহে প্রায় এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। রবিবার (১ আগস্ট) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘৭ অগাস্ট থেকে ১৪ অগাস্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। দেশের ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত সব জায়গায় এই টিকা উৎসব চলবে।’
সপ্তাহব্যাপী এই টিকাদান কর্মসূচিতে বয়স্ক মানুষদের অগ্রাধিকার দিয়ে তারপর অন্যদেরও টিকা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্করা। বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যে ২১ হাজার মানুষ মারা গেছেন, তাদের ৭৫ শতাংশের বয়সই ৬০ বছরের বেশি।
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সরকারি অ্যাপ সুরক্ষায় নিবন্ধন করতে হচ্ছে। তবে বেশি মানুষকে টিকা দিতে এই প্রক্রিয়া সহজ করার কথা বলেছেন জাহিদ মালেক।
তিনি আরও বলেন, ‘বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে কেবল এনআইডি অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টিকা দেওয়া হবে।’
গত ২৪ ঘন্টায় দেশে প্রায় তিন লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে সরকার ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আট দিনে ১ কোটি মানুষকে টিকা দিতে দিনে ১২ লাখের বেশি ডোজ প্রয়োগ করতে হবে।
এর আগে ভারত থেকে টিকা না আসায় দেশের টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। টিকার জন্য এরপর চীনের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ। এছাড়া টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও কয়েক দফা বাংলাদেশে টিকা আসে।
এসব টিকা পাওয়ার পর দেশে টিকা নেওয়ার বয়সসীমা কয়েক ধাপ কমিয়ে ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদেরও টিকা দেওয়া শুরু করেছে। আগামী ৭ আগস্ট থেকে শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও টিকাদান শুরু হতে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারিতে গণটিকাদান শুরুর পর এ পর্যন্ত ৮৮ লাখ ৬ হাজার জনকে কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৪০ হাজার।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকাদান পর্যবেক্ষণে আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্ক ফোর্সের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার টিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
টাস্ক ফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা।
টাস্ক ফোর্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এই বছরের শেষ নাগাদ ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভবপর হবে বলে টাস্ক ফোর্সের অনুমান। বাংলাদেশে সাত দিনের গড়ে দৈনিক টিকাদানের হার শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে দিনে টিকা পাচ্ছে শূন্য দশমিক ১১ জন।
যদি এই বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকাদান সম্পন্ন করতে হয়, তবে বাংলাদেশকে দিনে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ হারে টিকা দিতে হবে। আর ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে হলে দিনে শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ হারে টিকা দিতে হবে।