আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশি গরু দিয়েই কোরবানির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। এ বছর এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার বেশি। দেশি পশুতে চাহিদা পূরণ হওয়ায় দেশের বাইরে থেকে গরু আনা বন্ধে কঠোর অবস্থানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
পর্যাপ্ত পশু মজুত রয়েছে
গত বছর হৃষ্টপুষ্টকরণের আওতায় কোরবানির জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ সারাদেশে এ বছর এ কার্যক্রমের আওতায় মাঠপর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং অন্যান্য চার হাজার ৭৬৫টি পশুসহ মোট এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।চলতি বছর হৃষ্টপুষ্টকৃত গরু-মহিষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০টি, হৃষ্টপুষ্টকৃত ছাগল-ভেড়া ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮টি এবং গৃহপালিত গরু-মহিষের সংখ্যা ৬৮ লাখ ৮৮ হাজার ২০০টি, গৃহপালিত ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ২৫২টি।
গরু আমদানিতে কঠোর অবস্থান
কোরবানির আগে দেশের বাইরে থেকে আর কোনো গরু আমদানি না করার বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। রবিবার (২৭ জুন) আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত দেশীয় গরু মজুত থাকায় বিদেশি গরু আনা পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করছে সরকার। বাইরে থেকে গরু আসা বন্ধে এবার সীমান্ত এলাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে। দেশের বাইরে থেকে গরু আনা বন্ধের জন্য পশু ও পশু বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ছিনতাই প্রতিরোধ এবং সীমান্তবর্তী জেলায় গবাদিপশুর অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের যৌথ সহযোগিতা চাইবে মন্ত্রনালয়।
বিভাগ ভিত্তিক পশুর সংখ্যা
ঢাকা বিভাগে ৯২ হাজার ৮২১ জন খামারির ছয় লাখ চার হাজার ৬৬৪টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ হাজার ৯৬৩ জন খামারির এক লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৩টি, খুলনা বিভাগে এক লাখ ৭ হাজার ২২৭ জন খামারির আট লাখ ৭৮ হাজার ২৪২টি, রাজশাহী বিভাগে এক লাখ ২৭ হাজার ২৬১ জন খামারির ১৪ লাখ ১০ হাজার ৮০৯টি, রংপুর বিভাগে দুই লাখ ২২ হাজার ৪১৮ জন খামারির ১৩ লাখ তিন হাজার ২৪১টি, সিলেট বিভাগে ১২ হাজার ৯৭২ জন খামারির এক লাখ ৩৮ হাজার ৭২৫টি, বরিশাল বিভাগে ২০ হাজার ৩৮৭ জন খামারির এক লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৪ হাজার ৬৬ জন খামারির ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৫টি হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশু রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি অবনতি হলে নতুন সিদ্ধান্ত
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিনাত সুলতানা দ্য রিপোর্টকে জানান, রাসায়নিক ব্যতীত সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গরু হৃষ্ট-পুষ্টকরণে খামারিদেরকে উৎসাহিত করার জন্য এবং এ কার্যক্রমে রাসায়নিক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য অধিদফতরের মাঠপর্যায়ে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে গরুর হাট ও যাতায়াত বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসবে।
সার্বিক বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, কোনভাবেই বাইরে থেকে গরু আনতে পারবে না। যেখানে যেখানে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন আমরা ব্যবস্থা নেবে। কোরবানির পশু পরিবহনে ঝামেলা এড়াতে প্রয়োজনে ট্রেনে কোরবানির পশু আনা যাবে। ট্রেনে আনতে কোনো সমস্যা হবে না।
প্রস্তুত থাকবে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম
আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকাসহ দেশের উল্লেখযোগ্য হাট-বাজারে পশুর স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। গত বছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ২৩টি অস্থায়ী ও ১টি স্থায়ী পশুহাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য ২৫টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনার জন্য চারটি মনিটরিং টিম ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
পশুহাটে প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে রিজার্ভ টিম গঠন করা হয়। এছাড়া সারাদেশে দুই হাজার ৪০০টি কোরবানির পশুর হাটে দায়িত্ব পালনের জন্য এক হাজার ২০০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছির। এ বছরও সেভাবেই পশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।