ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০৬:০০ পিএম
বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান; ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালং শাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, বরোকলি, টমেটো, লাউ, সিমসহ বিভিন্ন ধরণের সব্জি চাষ হচ্ছে। এছাড়া, তিল, সরিষা, সরিষা ক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরোন, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষও হয়। এটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন-গণভবনের চিত্র।
গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে এভাবেই কাজে লাগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রামের গেরস্ত বাড়ির মতো পুরো গণভবনকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে এক বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
গণভবন সূত্র জানায়, উৎপাদিত এসকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়ে দেশবাসীকে বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবিলায় প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর সেই সবুর বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানান। শুধু আহবান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগিয়েছেন। পুরো গণভবনকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করেছেন।
গণভবন সূত্রে জানা যায়, গণভবনের বিশাল আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন শেখ হাসিনা। তিল-সরিষার মতো পেঁয়াজও চাষ করেছেন তিনি।
গণভবন সূত্র আরও জানায়, রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমিতে ৪৬ মণ পেঁয়াজ পাওয়া গেছে। পুরো জমিতে ১০০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ৫ জনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের প্রতি মাসে ৫ কেজির প্রয়োজন হলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মণ পেঁয়াজে ৭-৮’শ পরিবারের ১ মাসের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।
গ৩ ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে পাল্টাপাল্টি স্যাংশনে বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের অভাব দেখা দেয়। তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে সবাইকে প্রতি ইঞ্চিতে আবাদ করার পরামর্শ দেন।
গণভবন প্রাঙ্গণকে খামারে পরিণত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবেলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙ্গিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগনের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত উল্লেখ করে ইহসানুল করিম আরও বলেন, “দেশের মাটি-মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তার প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ফসলি উঠোনে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত।
ইহসানুল করিম জানান, প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রানিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, গণভবন আঙ্গিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান; ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালং শাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, বরোকলি, টমেটো, লাউ, সিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করছেন।
এছাড়া গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষা ক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরোন, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকিও করেন বলে গণভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এসব ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয় গণভবনে গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈব সার। এছাড়াও গণভবনের আঙ্গিনায় আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরুর খামার, দেশি হাস-মুরগি, তিথির, চীনা হাঁস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন। তিনি গণভবন পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতল, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।