গ্রেপ্তারের আদেশ শুনেই দৌড়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২২, ২০২২, ০৬:০৪ পিএম

গ্রেপ্তারের আদেশ শুনেই দৌড়

অর্থ আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টিকে জামিন না দিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ আদেশ শোনার সঙ্গে সঙ্গে গোপনে এজলাস কক্ষ থেকে বের হয়ে যান ট্রাস্টি বেনজীর আহমেদ। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি পালিয়ে যেতে থাকেন। তার উদ্দেশ্য ছিল গ্রেপ্তার এড়ানো। 

তবে আদালত ত্যাগ করে তার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি কয়েকজন সংবাদকর্মী ও একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের দৃষ্টিগোচর হয়। সংবাদকর্মীরা তার পিছু নেন। এ সময় আদালতের আদেশ অমান্য করে এভাবে চলে যাওয়ার কারণ তার কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। তখন ট্রাস্টি বেনজীর আহমেদ হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। বিষয়টি দেখে রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা ও কোর্টের কর্মকর্তারা তাকে সঙ্গে নিয়ে এজলাস কক্ষে চলে আসেন। রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আদেশ দেওয়ার পরই এ ঘটনা ঘটে। 

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে শাহবাগ থানা পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদেরকে নিম্ন আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের অপর তিন জন হলেন- এম এ কাশেম, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান।

গত ১৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যর জামিন বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। চারজনের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।

তার আগে গত ১২ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী ঢাকায় এ মামলা করেন বলে কমিশনের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান জানান।

মামলার আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী। এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন বা সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯ হাজার ৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। পরে নিজেরা ওই এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

‘অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেন।’মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।

Link copied!