ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তিনি। নাম মোহাম্মদ সেলিম। তবে হাজী সেলিম নামেই বেশি পরিচিত। অতীতে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। এবার দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাগারে গিয়ে ফের আলোচনায় আসলেন তিন মেয়াদে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।
আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে হাজী সেলিম বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে এমপি পদে নির্বাচন করতে চাইলে দলের হাইকমান্ড তাতে সায় দেইনি। ক্ষোভে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ওই সময়ের ওয়ার্ড কমিশনার হাজী সেলিম। পরে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ওইসময় থেকে আওয়ামী লীগের সাথে আছেন হাজী সেলিম।
হাজী সেলিম বর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টমণ্ডলীর সদস্য। এর আগে, ঢাকা মহানগর শাখা আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলিয়েছেন।
রাজনীতিতে হাজী সেলিমের বিপদ শুরু হয় বিএনপি-চারদলীয় জোর সরকার এবং সর্বশেষ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন, চুরি এবং দুর্নীতি ও অবৈধ আয়ের কারণে অন্তত ১২০টি মামলা দায়ের করা হয় হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা করে। ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল ওই মামলায় বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনে ‘সহযোগিতার’ দায়ে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা হাজী সেলিম প্রথমে পুরান ঢাকায় ব্যবসায় এবং পরে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। তার উত্থানের মূল উপাদান ছিল 'রাজনীতি'-এমন ধারণা স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের।
রাজনীতিতে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার পর ‘জবর-দখলেও’ বেশ সমালোচিত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তার দখল সাম্রাজ্য রাজধানীর বাইরেও বিস্তৃত। তার বিরুদ্ধে বধিরদের জমিতে পেট্রোল পাম্প তৈরি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হলের অবকাঠামো বদলে ফেলে ১০তলা ভবন নির্মাণ করে স্ত্রীর নামে ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ তৈরি, ঢাকার প্রথম বাণিজ্যিক ভবন চকবাজারের 'জাহাজ বাড়ি' ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগ থাকলেও বেশ ভাল সময় পার করছিলেন হাজী সেলিম। তবে দেড় দশক আগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড হাই কোর্টেও বহাল থাকায় এমপি পদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। এবিষয়ে দুদক ও হাজী সেলিমের আইনজীর মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততোধিক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেছেন, তিনি (হাজী সেলিম) দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার আর সংসদ সদস্য থাকার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান মোতাবেক তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।’
তবে সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ ‘থাকবে বলে মত প্রকাশ করেছেন হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন হাজি সেলিম। আদালত তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাজী সেলিমকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে কারাদণ্ড থেকে খালাস এবং জামিন চেয়ে আপিল আবেদন করেছেন ক্ষমতাসীন দলের এই এমপি।