নিয়ম অনুযায়ী ভবন বা ইমারত নির্মাণে বেশ কয়েকটি ছাড়পত্র ও অনুমোদন নেওয়ার দরকার পড়ে। নিয়মে থাকলেও রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় আলোচিত তেঁতুলতলা মাঠে পুলিশের স্থাপনা নির্মাণের কাজে এসব মানা হচ্ছে না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন থেকে শুরু করে স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকেও কোনো নকশা তৈরি বা অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
জনস্বার্থে কলাবাগান থানা নির্মাণ!
সরকারি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে রাজউকের কোনো আপত্তি নেই মর্মে ছাড়পত্র পাওয়া গেছে উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান গতকাল বলেছেন, আমরা কলাবাগানে কোনো কমপ্লেক্স নির্মাণ করছি না। সেখানে এখন দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। আর দেয়াল নির্মাণ করতে কোনো অনুমোদন লাগে না।
কিন্তু তেঁতুলতলা মাঠে পুলিশের লাগানো ‘‘কলাবাগান থানা ডিএমপি, ঢাকার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জমি’’ লেখা সাইবোর্ড রয়েছে। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য গত এক মাস ধরে নিয়মিত অবস্থান করছে। এসব কথা জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।
জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমীন উল্লাহ নূরী বলেন, ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ এর সংজ্ঞায় স্পষ্ট বলা আছে, ইট-রডসহ নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কোনো কিছু তৈরি করলেই তা ইমারত বলে গণ্য হবে। সেখানে দেয়াল তো নিশ্চয় এসব উপকরণ দিয়েই করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দেয়াল নির্মাণেরও অনুমোদন লাগবে।
বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে কলাবাগান থানার জন্য ধানমন্ডি মৌজার শূন্য দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭–এর সব বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছে। কলাবাগান থানার জন্য অধিগ্রহণ করা শূন্য দশমিক ২০ একর জমি জরিপ অনুযায়ী সরকারি সম্পত্তি ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে রাজউকের কোনো আপত্তি নেই মর্মে ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরেরও অনাপত্তি পাওয়া গেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ওই জমিতে এলাকাবাসীর নিরাপত্তার সুবিধার্থে স্থায়ীভাবে কলাবাগান থানা স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দেন।
যে কোনো নির্মাণকাজে লাগে একাধিক ছাড়পত্র
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধিক্ষেত্র ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় যেকোনো ধরনের স্থাপনা বা ইমারত নির্মাণ করতে হলে অনুমোদন নিতে হবে এ সংস্থাটি থেকে। এছাড়া স্থাপনার নকশা অনুমোদনের আগে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রও নিতে হবে রাজউকের কাছ থেকে। এরপর জমির মালিকানা, নকশা অনুমোদনকারী কর্র্তৃপক্ষের তথ্যসহ নানা ধরনের তথ্য দিয়ে নির্মাণ সাইটে সাইনবোর্ড ঝোলাতে হবে। বিদ্যমান আইনে এ ধরনের বিধান থাকলেও তেঁতুলতলা মাঠে পুলিশের স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব মানা হচ্ছে না। বিতর্কিত এ স্থাপনার বিষয়ে রাজউকের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ মহলের কাছেও অনুমোদনসংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। এছাড়া স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকেও নকশা তৈরি বা অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মানজুরুর রহমান বলেন, কলাবাগানের তেঁতুলতলা এলাকায় কোনো কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পর্কিত কোনো আবেদন স্থাপত্য অধিদপ্তরে আসেনি। আমরা কলাবাগান থানার কমপ্লেক্স নির্মাণের কোনো নকশা অনুমোদনও করিনি।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঐতিহাসিকভাবে তেঁতুলতলার মাঠের মালিকানা নেই। কিন্তু থানা করার জন্য যে পরিমান জায়গা প্রয়োজন, তাও এখানে নেই। এখানে ভবন করা মানে হলো সামনের রাস্তাটিও দখল করে ফেলা। এতে করে পুরো এলাকাটি অচল হয়ে যাবে।