এপ্রিল ২৫, ২০২২, ০১:২৩ পিএম
রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আগে শিশুদের জন্য বিকল্প খেলার মাঠের সন্ধান না দিলে এখানে কোনো ভবন নয়, বলেছেন তিনি।
রবিবার ওই মাঠরক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ায় ১৩ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটকে রাখা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর (সংক্ষেপে - উদীচী) কর্মী সৈয়দা রত্না ও তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলেকে।
রবিবার সকাল ১১টার দিকে মা-ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় কলাবাগান থানা পুলিশ। খবর পেয়ে দুপুর ২টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকের ওই মাঠে যান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ মানবাধিকারকর্মীরা। পরে রাতে স্থানীয়দের সঙ্গে কলাবাগান থানার সামনে অবস্থান নিয়ে মা-ছেলের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা। তাদের বিক্ষোভের মুখে রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে মুক্তি পান সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে।
এ সময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিশুদের জন্য বিকল্প খেলার মাঠের সন্ধান না দিলে ওই মাঠে থানার ভবন নির্মাণ করতে দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুলিশ রত্না আপা ও তার ছেলেকে যেভাবে ছেড়ে দিয়েছে, তেমনি ওই মাঠে থানার ভবন নির্মাণ থেকে পুলিশ সরে আসবে বলে আমি আশা করছি। ওই এলাকায় শিশুদের জন্য খেলার মাঠ একটিই। বিকল্প মাঠের সন্ধান না দিলে সেখানে থানার ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। এজন্য আন্দোলন চলবে।’
পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকের খোলা জায়গাটি তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করে। পাশাপাশি মাঠটিতে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হয়।
এই মাঠে কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এর প্রতিবাদ করছেন স্থানীয় লোকজন।
কী হয়েছিল?
রবিবার সকালে পুলিশের একটি দল তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত একটি মাঠে নির্মাণ কাজ শুরু করে। বছর-খানেক যাবত এই মাঠটিতে থানা-ভবন না তোলার জন্য এলাকাভিত্তিক একটি আন্দোলন চলছিল। এই আন্দোলনের একজন সংগঠন সৈয়দা রত্না।
পুলিশ নির্মাণ কাজ শুরু করলে সৈয়দা রত্না সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি লাইভ করছিলেন।
এক মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ওই লাইভটি চলার এক মিনিট দুই সেকেন্ডের সময় ডোরাকাটা গেঞ্জি পরা একজন ব্যক্তি সৈয়দা রত্নাকে ধমকাতে শুরু করেন।
লাইভ বন্ধ করতে বলে শুরু হওয়া ধমকের সাথে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যোগ দেন আরো কয়েকজন।
শেষ কয়েক সেকেন্ডে কারো মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না, তখনো ধমকের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ফোনটি কেড়ে নেয়ার এবং লাইভটি বন্ধের শব্দ পাওয়া যায়।
সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি সাগুফতা বিবিসিকে বলেছেন, সকালে পৌনে ১১টার সময় ওই লাইভ চলার সময়ই তার মাকে কয়েকজন মহিলা পুলিশ টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।
এর কয়েক মিনিট পর তাঁর কলেজ পড়ুয়া ভাইকেও পুলিশ তুলে থানায় নিয়ে যায়।
পরিবারের অভিযোগ, তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত কলাবাগানের ওই মাঠটিতে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় তাঁদের আটক করা হয়েছে।