নভেম্বর ২২, ২০২২, ০১:৪৪ পিএম
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। নদী-নালা, খাল-বিল রক্ষায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অগ্রগামী আর কেউ নাই।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন নদীগুলো রক্ষা করতে না পারলে দেশকে বাঁচানো যাবেনা। নদীগুলো আমাদের শরীরের শিরার ন্যায় কাজ করছে। নদী রক্ষায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কাজ করছে। আমরা চাই নদী রক্ষায় বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে আসুক, সচেতন হোক। নদীগুলোকে দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। দখল ও দূষণের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।
প্রতিমন্ত্রী আজ রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক আত্রাই, ইছামতি, বড়াল, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীর সমীক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের রাজশাহী বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সিলেটসহ দেশের অনেক অঞ্চলে বন্যা ও দুর্যোগ বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন জলাভূমিতে বাঁধ দিয়ে কিছু করা যাবেনা। ফসলি জমি নষ্ট করা যাবেনা। আকস্মিক বন্যায় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেলক্ষ্যে সার্ভে করা হচ্ছে। সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ি পদক্ষেপ নেয়া হবে। নদী, খাল,বিল ও জলাশয় রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী 'বদ্বীপ' পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। নদী রক্ষায় জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটি কাজ করছে। দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন থেকে অভিযান পরিচালনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারতের সাথে কানেক্টিভিটি বাড়াতে কাজ করছি। কাস্টমসের সাথে আলোচনা হয়েছ। রাজশাহীর গোদাগাড়ি- ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত নৌ প্রটোকল রুটটি চালু করতে পারব।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরির জন্য পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার চারপাশের নদীগুলো রক্ষায় প্রথম পদক্ষেপ নেন। ৪০ বছরের আবর্জনা বর্তমান সরকারের ওপর চেপেছে। আগে আমরা নদী, খাল-বিল খনন দেখতে পাইনি। শুধু রাজনীতি হয়েছে। এখন খনন হচ্ছে। যার ফলে খাল বিলে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাচ্ছি। রাজনীতির নামে আতংক ছড়ানো হচ্ছে; যা একটি অপরাধ। আমাদের অর্থনীতি মজবুত অবস্থায় আছে; তাই নদী নিয়ে কাজ করতে পারছি। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। দেশি-বিদেশি কারো সাথে কোন কমপ্রোমাইজ করবনা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ‘৪৮টি নদী সমীক্ষা প্রকল্প’ ও রাজশাহী বিভাগীয় নদী রক্ষা কমিটি এ কর্মশালার আয়োজন করে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় নদী রক্ষা কমিটির আহবায়ক জি এস এম জাফরউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ‘৪৮টি নদী সমীক্ষা প্রকল্পের’ প্রকল্প পরিচালক ইকরামুল হক।
কর্মশালায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আওতাধীন ‘৪৮টি নদী সমীক্ষা প্রকল্প’ কর্তৃক সমীক্ষাকৃত আত্রাই, ইছামতি, বড়াল, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীর দখল, দূষণ, ভাঙ্গণ ও নাব্যতাসহ সমীক্ষায় প্রাপ্ত অন্যান্য তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়। ৪৮টি নদী সমীক্ষা প্রকল্পের এনভায়রনমেন্ট এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ স্পেশালিস্ট মোঃ মনির হোসেন চৌধুরী তথ্যাদি উপস্থাপন করেন।
তথ্যাদির মধ্যে আত্রাই, ইছামতি, বড়াল, মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীর উৎপত্তিস্থল, পতিতস্থল, দৈর্ঘ্য, গতিপথের জেলা, উপজেলা, মৌজা, নদীর তীরবর্তী স্থাপনার চিত্র রয়েছে। উক্ত পাঁচটি নদীর তীরে ৬,৮৪৮টি স্থাপনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্থাপনা ২,৪৫৯টি রয়েছে ইছামতির তীরে এবং সবচেয়ে কম স্থাপনা রয়েছে আত্রাইয়ের তীরে। এর সংখ্যা ২৩৩টি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সংশ্লিষ্ট নদীগুলোতে চলমান কার্যক্রম এবং প্রকল্প সম্পর্কে তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়।
উল্লেখ্য, নদী দূষণ, অবৈধ দখল এবং অন্যান্য অপব্যবহার থেকে ৪৮টি নদী সংরক্ষণ ও তথ্য ভান্ডার তৈরির লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ‘৪৮টি নদী সমীক্ষা প্রকল্প’ গ্রহণ করে। ২০১৮ সালের জুলাইতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ২৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সমীক্ষাভূক্ত ৪৮টি নদী- দেশের আটটি বিভাগের ৫২টি জেলার অন্তর্ভূক্ত।