রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। দিনটিকে দেশব্যাপী ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এদিন গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার ভোর ৬ টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়।
অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল, জাতির পিতার সমাধী ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মোনাজাত, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ইত্যাদি। এই সকল কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেসময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল এ উপলক্ষে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী ফাতেহা পাঠ করেন এবং মুনাজাতে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
পরে দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্যেও দোয়া করা হয়। এর আগে রাষ্ট্রপতি ধামনন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে এসে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে স্বাগত জানান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সেসময় আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব বঙ্গবন্ধুর সমাধীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেসময় বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড-অব-অনার প্রদান করে।
বুধবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়।
জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক সমাবেশ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল এবং দরিদ্র কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরা বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। কৃষকলীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভায় সভাপতিত্ব করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউড প্রাঙ্গনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সারাদেশের সকল সরকারি হাসপাতাল রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি আজিমপুরে এতিমখানায় শিশুদের মাঝে বস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করে।
এছাড়া মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে বুধবার বেলা ১১ টায় ১০০ জন কুরআনে হাফেজের মাধ্যমে ১০০ বার কুরআন খতম করা হয়। কুরআন খতম শেষে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের শহীদসদস্যদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
এদিকে সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহাওে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।