র্যাব হেফাজতে নওগাঁর জেসমিনের মৃত্যু নির্যাতন নয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন।
সোমবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে রবিবার (২ এপ্রিল) বিকেলে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি।
জেসমিনের মৃত্যুর ৯ দিন পর তাঁর এই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলো রামেক ফরেনসিক বিভাগ।
সোমবার রামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ফরেনসিক বিভাগের বোর্ড বসিয়ে রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে। তারপরই এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। এর পর সেই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন রোববার বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আটকের পর মানসিক চাপ থেকেই তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। আর এই কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে আমরা তাঁর শরীরে দুটো জখম পেয়েছি। যা খুবই ছোট। এর একটা হচ্ছে কপালের বাম পাশে ছোট 'কাট'। যেটার পরিমাণ ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ ১ ইঞ্চিরও কম। এছাড়া ডান হাতের কনুইয়ের ভেতর দিকে একটি ফোলা জখম ছিল। যেটার সাইজ ২ সেন্টিমিটার। এটা সাধারণত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রোগীর হাতে ক্যানোলা করার সময় হয়। শরীরের শিরা-উপশিরা খুঁজে না পাওয়া গেলে একাধিকবার সিরিঞ্জিং করা হয়। তখন এই ধরনের সোয়েলিং (ফোলা) হয়। তাই জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত মতামতে আমরা বলেছি- এই যে দুটি ইনজুরি রয়েছে তা মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয়। তাঁর মৃত্যু হয়েছে 'শক' (মানসিক চাপ) থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেই।
রামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরও জানান, সুলতানা জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রথমে গিয়েছিলেন ফরেনসিক বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. তাজনীন জাহান। তাঁরই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার কথা ছিল। তবে তিনি বিভাগীয় প্রধানকেও মর্গে ডাকেন। তাঁর ডাকে বিভাগীয় প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরেক প্রভাষক জামান নিশাত রায়হানকে সাথে নিয়ে মর্গে যান। পরে জেসমিনের মরদেহ তাঁরা একসঙ্গে দেখেন। এর পর তিনজনের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করেন।
এর আগে র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। অফিসে যাওয়ার পথে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করে র্যাব। ওই দিন দুপুর ১২টার পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন সুলতানা নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ সকালে তিনি মারা যান।
জেসমিনের মৃত্যুর পর দিন ২৫ মার্চ রামেক এর মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এর পর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেসমিনের মরদেহ গোসল করানো হয় রাজশাহীতেই। পরে কাফন পরানো মরদেহ কফিনে করে নওগাঁয় নিয়ে যায় র্যাব। ওই দিন বিকেলে নওগাঁ সরকারি কবরস্থানে র্যাবের উপস্থিতিতেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনরা।
সরকারের যুগ্মসচিব বর্তমানে স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে নিয়েই র্যাব একটি অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্নজনের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জেসমিনকে আটক করে র্যাব। আর র্যাব হেফাজতে এ নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এরপর এই ঘটনা উচ্চ আদালতের নজরে আসে। তাঁর মৃত্যুর কারণ জানতে আদালতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।