মে ৩১, ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম
স্থানীয় এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত এক প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বৈঠক করেছেন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষকেরা! গতকাল মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অংশ নেওয়া শিক্ষকদের অধিকাংশই বিগত বিভিন্ন নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে।
জানা যায়, আড়াইহাজার পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সুন্দর আলীকে বিজয়ী করতে ওই বৈঠক করেছেন উপজেলার শিক্ষকেরা। বিগত বেশ কিছু নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষকেরা সুন্দর আলীর পক্ষে বৈঠক করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ওই শিক্ষকেরাই যদি পুনরায় বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
এদিন রাতে বর্তমান মেয়র ও প্রার্থী সুন্দর আলীর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রচারিত একটি লাইভে দেখা যায়, প্রায় ১০-১২ জন শিক্ষক নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সুন্দর আলীকে পাশে রেখে বৈঠক করছেন। এ সময় হাজি বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন বুলবুলকে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়।
সাখাওয়াত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, আপনি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন আমরা এই ব্যাচ সেভাবেই কাজ করব। আমরা যদি ঠিকভাবে কাজ করি তাহলে নাইনটি ফাইভ পার্সেন্ট ভোট আনা সম্ভব। আমাদের আচরণবিধি কী আছে, কী নাই এগুলো দেখার দরকার নাই।
এ সময় উপস্থিত সকল শিক্ষকেরা হাততালি দিয়ে বক্তার একমত পোষণ করেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রবিউল আলম বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ আমার কাছে অভিযোগ দেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন হাজী বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন বুলবুল, একই কলেজের আরেক সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বাবু, প্রভাষক মোজাম্মেল হক, সুলতানসাদী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক লোকনাথ পোদ্দার, একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বাচ্চু, ইউনাইটেড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ, রোকনউদ্দিন গার্লস ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন রতন, একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া স্বপন, জাহানারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক, উজান গোবিন্দী বিনাইরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম। তাঁরা সবাই আড়াইহাজার পৌরসভায় নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে অঙ্গীকার করেন।
এমন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই শিক্ষকেরাই যদি পুনরায় বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
নারিকেল গাছ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আলী মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কাছে বারবার দাবি জানাচ্ছি। আমরা লক্ষ্য করেছি আড়াইহাজারে বেশ কিছু শিক্ষক অধ্যাপক প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর হয়ে ভোট চাইছেন। নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারে কাজ শুরু করেছেন। এরাই আবার নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। আমি এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সুন্দর আলীর প্রার্থিতা বাতিল হওয়া উচিত।
জগ প্রতীকের প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও মোবাইল প্রতীকে মামুন অর রশীদ জানান, এটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। যেই শিক্ষকেরা এই বৈঠকে বসেছেন, তাদের যেন নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ওই বৈঠকে বক্তব্য দেওয়া হাজী বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন বুলবুল দাবি করেন, আমরা যারা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তারা কেউ ই এবার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করব না। যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক তাদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী কাজে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নাই।
আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া স্বপন বলেন, আমি প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করব না এবার। আমরা যারা বৈঠক করেছি তাঁরা কেউই দায়িত্ব নেবে না। বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার জানে। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত। ফলে এখানে বৈঠক করাটা অপরাধ মনে করছি না।