বাংলাদেশের সাহস, সক্ষমতা আর অহঙ্কারের প্রতীক বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার কয়েক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। সেতু উদ্বোধনের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু শুধু দেশের আত্মনির্ভরশীলতা বা আত্মমর্যাদাই বৃদ্ধি করেনি বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে এসেছে এক অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পর এত বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত করতে পারায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রশংসা ও অভিনন্দনে ভাসছে বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় এটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত: পাকিস্তান
ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাস থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো এক বার্তায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পদ্মা সেতুকে শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্পের একটি প্রমাণ বলেও তিনি অবহিত করেন।
পদ্মা সেতু জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে: যুক্তরাষ্ট্র
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের দেওয়া বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসন জানায়, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করবে, বাণিজ্যকে উৎসাহিত করবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রসারে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ হলো পদ্মা সেতু বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ভারতের বাঙালিদের জন্যও একটি ‘শুভক্ষণ’: ভারত
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘কঠিন’ কিন্তু ‘সাহসী’ সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু একই সাথে ঐতিহ্যবাহী বাংলার সংস্কৃতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
দোরাইস্বামী বলেন, একটি বড় প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু শুধু ইট ও স্টিলের নিরিখে একটি বিশাল কাঠামো নয় বরং এটি হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপারের মানুষের সংস্কৃতি ও আবেগের প্রতীকী সংযোগকারী।
তিনি বলেন, ‘সেতুটি ব্যবসার চেয়েও অনেক কিছুর সংযোগকারী; এটি মানুষের সংযোগকারী, এটি আবেগের সংযোগকারী এবং এটি বাংলার সংস্কৃতির সংযোগকারী।’ তিনি বলেন, এটি ভারতের বাঙালিদের জন্যও একটি ‘শুভক্ষণ’।
বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় মাইলফলক: জাপান
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে তার আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে জাপান। ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকো বলেছেন, “এই পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় একটি চমৎকার মাইলফলক। আর এটি বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে নির্মাণ শেষ হয়েছে।”
তিনি পদ্মা সেতুকে দেশের স্বপ্ন ও গর্ব হিসেবে অভিহিত করেন। বাংলাদেশ এর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য কি করতে পারে এটি তার বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধিও আকাঙ্খা পূরণ করবে।
জাপান দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিতে আগ্রহী জানিয়ে রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকো আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত যে এক সময় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হবে। জাপান সরকার ও জাইকা এই সরকারের নির্মাণ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বিবেচনার অবস্থানে থাকবে।”
পদ্মা সেতু বাংলাদেশির জন্য গর্বের: অস্ট্রেলিয়া
পদ্মা সেতু প্রতিবেশীদের সাথে বাংলাদেশিদের আরও কার্যকরভাবে সংযুক্ত করে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ‘গতিশীল’ করবে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেছেন, ‘সেতুটি বাংলাদেশিদের বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে আরও কার্যকরভাবে সংযোগ বৃদ্ধি এবং এতদঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল করার কাজটি সহজ করে তুলবে।’
পদ্মা সেতু বাংলাদেশিদের জন্য একটি বড় অর্জন এবং সব বাংলাদেশির জন্য এটা গবের্র বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “পদ্মা সেতু ভ্রমণ সময় কমিয়ে সারা দেশে মানুষের সহজ চলাচল, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এবং নিজ পরিবার-পরিজনদের দেখাশুনাসহ জীবন যাত্রাকে সহজ করে জাতীয় অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।”