পর্দা উঠলো বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় আয়োজন মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই বইমেলা রূপ নেবে লেখক-পাঠকের মিলনমেলায়।
বুধবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অতীতের অপ্রীতিকর ঘটনা মাথায় রেখেই এবারের বইমেলায় যে কোনো অপতৎপরতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পোশাকে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য ছাড়াও মেলার নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মেলা প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।
ডিএমপি জানায়, মেলাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শহীদ মিনার ও শাহবাগ-নীলক্ষেত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে তল্লাশি দল থাকবে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তাঁরা তল্লাশি করবেন।
মেলা প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। মেলায় স্থাপিত ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নজরদারি করা হবে।
গ্রন্থ উন্মোচন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন গ্রন্থ উন্মোচন করেছেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করেছেন। ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থের মধ্য থেকে দেওয়া হবে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’। এছাড়া প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য দেওয়া হবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’। প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচার করে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে।
বইমেলার বিস্তারিত তথ্য
এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। এবার বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশন-এর অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দিরগেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরো ৩টি প্রবেশ ও বাহিরপথ আছে।
এবার ১৫ জনকে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন—কবিতায় ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত, কথা সাহিত্যে তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণায় মাসুদুজ্জামান, অনুবাদে আলম খোরশেদ, নাটকে মিলন কান্তি দে ও ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশু সাহিত্যে ধ্রুব এষ ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুহাম্মদ শামসুল হক।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশবিজ্ঞানে মোকাররম হোসেন, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণ কাহিনিতে ইকতিয়ার চৌধুরী এবং ফোকলোরে পুরস্কার পেয়েছেন আবদুল খালেক ও মুহাম্মদ আবদুল জলিল বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।