দেশে শিশুমৃত্যুর ৬২ শতাংশ হয় পানিতে ডুবে। যার ফলে শিশুদের রক্ষা করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই সাঁতার প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে পানিতে ডোবা থেকে রক্ষা করার প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে জানায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। মঙ্গলবার (২২ জুন) "পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধ" এই প্রতিপাদ্যে জাতীয় পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় প্রতিমন্ত্রী এ বক্তব্য দেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাঁতার প্রশিক্ষণ
আলোচনা সভায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের গুরুত্ব দেয়া হয়। এতে বলা হয় দিনের একটা বড় অংশ শিশুরা কাটাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিশুদের প্রশিক্ষণের উপযুক্ত সময়। পাশাপাশি পরিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে জোর দেয়া হয়। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ হওয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্মুখিন হয় শিশুরা। তাই সকলের সমন্নিত অংশগ্রহণই শিশু অপমৃত্যর হার রোধ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মৃত্যুর সঠিক তথ্য নেই
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, প্রতিদিন পাঁচ বছর বয়সী ৩০ জন শিশু মারা যায়। যার মধ্যে শতকরা ৬২ জন মারা যায় পানিতে ডুবে। তবে এ সব তথ্য সমূহ সূনির্দৃষ্ট ভাবে সংগ্রহ না থাকায় এর ব্যপকতা উঠে আসছে না সংবাদ মাধ্যম গুলোতে। স্থানীয় ও ইউনিয়ন পর্যায় তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা রাখতে হবে।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর মহামারী
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের (আইএইচএমই) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখের মধ্যে পানিতে ডুবে মানুষের মৃত্যু হয় ৮ দশমিক ৯ জনের। আইএইচএমই-এর ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পানিতে ডুবে মানুষ মারা যাওয়ার হারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম।
২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অর্থায়নে দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশে (সিআইপিআরবি) এবং আইসিডিডিআর’বি পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ৩০টি শিশুর বয়স পাঁচ বছরের কম। ২০১৬ সালের বাংলাদেশ হেলথ ও ইনজুরি সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, ইনজুরি বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পানিতে ডুবে মৃত্যু। ইনজুরি বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুর মধ্যে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ পানিতে ডুবে মারা যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাণ যায় আত্মহত্যায়, এই হার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ হার নিয়ে এরপরেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা।