সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমায় জেলা ও উপজেলা শহরের বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে কয়েকটি গ্রামে পানি না কমায়, ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, সুনামগঞ্জে গতকাল শনিবারও রোদ ছিল। পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টি হয়নি। এ সময় পাহাড়ি ঢলও নামেনি। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক এখনো তলিয়ে আছে। গ্রামে বাড়িঘর থেকে পানি না নামায় ফিরতে পারছে না অনেকে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম উদ্দিন বলেন, তাঁদের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৪০টির মতো পরিবার আছে।
বন্যার কারণে হবিগঞ্জের ছয়টি উপজেলার প্রায় ২০০ গ্রামে গত ৮ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। নেত্রকোনার ৩৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো প্রায় সোয়া লাখ মানুষ অবস্থান করছেন। নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের মুক্তাহার গ্রামের মনির মিয়া বলেন, রাত হলে অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। বর্ষার সময় ডাকাতির আশঙ্কা আছে। এ কারণে রাতে গ্রামবাসীকে পাহারা দিতে হয়।
নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় বন্যায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪১০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমায় এরইমধ্যে কোনো কোনো পরিবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরেছেন। ৩৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ১ লাখ ১২ হাজার মানুষ আছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলা। পাঁচটি উপজেলায় এখনো পানিবন্দী তিন লক্ষাধিক মানুষ।
সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোর যেসব স্থানে পানি জমে ছিল, সেগুলো প্রায় নেমে গেছে। তবে নগরের যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কুয়ারপাড়, লালাদীঘির পাড় এলাকার পাড়া-মহল্লার পানি কালো রং ধারণ করেছে। এসব স্থানে জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শাহজালাল উপশহর এলাকার এ ব্লকের বাসিন্দা রাজিউল করিম বলেন, আগে পানির স্রোত ছিল, এর কারণে ময়লা–আবর্জনা নেমে যেত। তবে এখন সেটি নেই।
নীলফামারীর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ২২ জুন থেকে পানি কমতে থাকে। গতকাল(২৫ জুন) বেলা তিনটার দিকে পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।