বাস ডাকাত চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১, ০৪:১৭ পিএম

বাস ডাকাত চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার

সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় হানিফ পরিবহনের চালক হত্যাসহ বাস ডাকাতির সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা বাস ডাকাত চক্রের ০৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর অদূরে গাবতলী-আশুলিয়া এলাকায় অভিযার চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের নিকট হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ ০৫ টি ছুরি, লুটকৃত ০১টি মোবাইল ফোন এবং তাদের ব্যবহৃত ০৫ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গত ০৪ সেপ্টেম্বর শনিবার র্যাব-১ ও ১৩ এর আভিযানিক দল হত্যাসহ ডাকাতির সাথে সরাসরি জড়িত (১) শ্রী নয়ন চন্দ্র রায় (২২), পিতা- শ্রী সুশীল চন্দ্র রায়, জেলা-গাইবান্ধা, (২) মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (ছদ্মনাম লালু) (২২), পিতা-মৃত রাজ্জাক আলী, জেলা- গাইবান্ধা (৩) মোঃ ওমর ফারুক (১৯) পিতা- মোঃ আনোয়ার, জেলা- গাইবান্ধা, (৪) মোঃ ফিরোজ কবির (২০), পিতা- মোঃ আবু বকর, জেলা- গাইবান্ধা, (৫) আবু সাঈদ মোল্লা (২৫), পিতা- মোঃ আব্দুর রউফ, জেলা- গাইবান্ধা এবং (৬) শাকিল মিয়া (২৬), জেলা-গাইবান্ধা এই ছয়জনকে আটক করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

গত ৩১ আগস্ট দিবাগত রাতে ঢাকা হতে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া হানিফ পরিবহণের একটি বাস রংপুর জেলার পীরগঞ্জ এলাকায় পৌঁছার পর দুর্ধর্ষ ডাকাতির কবলে পড়ে। উক্ত বাসে যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দলের সদস্যদের ছুরিকাঘাতে বাসের চালক মনজুর হোসেন (৫৫) গুরুতর আহত হয় এবং পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করে। বর্ণিত ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার মোঃ পইমুল ইসলাম বাদী হয়ে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা রুজু করে যার নম্বর-০৪ তারিখ-০১/০৯/২০২১ ইং ধারা- ৩৯৬/৩৯৭ পেনাল কোড।

৩১ আগস্ট রাত আনুমানিক ২.০০ টায় হানিফ পরিবহণের একটি নন এসি বাস (ঢাকা মেট্রো-গ-১৫-৩৮১০) রাজধানী ঢাকা হতে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে গাবতলী ছেড়ে যায়। বাসটি রাত আনুমানিক ২.৩০ টায় সাভারে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাত দলের ০৩ সদস্য (মোঃ রিয়াজুল ইসলাম ছদ্মনাম-লালু, আবু সাঈদ মোল্লা ও অপর ০১ জন) এবং আনুমানিক ২.৫০ টায় নবীনগর পৌঁছালে ডাকাত দলের আরো ০৩ জন (শ্রী নয়ন চন্দ্র রায়, মোঃ ওমর ফারুক ও মোঃ ফিরোজ কবির) সদস্য যাত্রীবেশে বাসে ওঠে। অতঃপর বাসটি আনুমানিক ২.৩০ টায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বিটিসি মোড় অতিক্রম করার পর বাসে যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে। তারা প্রথমে বাসের চালক মনজুর হোসেনকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় চালক বাসটি ঘুরিয়ে আনার চেষ্টা করলে তারা আবার চালকের কাঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ডাকাত দলের সদস্য মোঃ রিয়াজুল ইসলাম(লালু) বাসটি চালাতে থাকে এবং ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা বাসে লুটপাট করতে করতে রংপুরের শঠিবাড়ীর ভাবনা ফিলিং স্টেশনে ইউটার্ন করে পুনরায় উল্টো পথে রওয়ানা করে। পলাশবাড়ী পৌঁছার আগে ডাকাতেরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জের চম্পাগঞ্জ হাইস্কুলের সামনে রাত আনুমানিক তিনটার সময় যাত্রীসহ বাসটি রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতেরা যাত্রীদের মুঠোফোন এবং নগদ আনুমানিক ৩০/৪০ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় বাসের চালক মনজুর হোসেনকে নিকটস্থ পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নয়ন চন্দ্র রায় অপরাধী চক্রের মূল হোতা। চক্রের সদস্যরা আশুলিয়ায় বিভিন্ন গার্মেন্টসে খন্ডকালীন চাকুরী, ক্ষুদ্র ব্যবসা অটো চালক ইত্যাদি পেশায় জড়িত ছিল। তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটির সদস্য ১০/১২ জন। এই ডাকাত দলের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত উত্তরবঙ্গগামী বাসে যাত্রীবেশে উঠে ডাকাতি করে আসছিল। তারা ২০২০ সালের ডিসেম্বর হতে এখন পর্যন্ত ৭/৮ টি বাসে ডাকাতি করেছে বলে জানায়। ইতোপূর্বে এই ডাকাত চক্রটি  পলাশবাড়ী থেকে পীরগঞ্জ ৪৮ কিলোমিটার এলাকায় গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ একটি যাত্রীবাহী বাস, ০১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ শঠিবাড়ি স্পেশাল, ১২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ সৈকত পরিবহন, ০৮ মার্চ ২০২১ তারিখ শ্যামলী পরিবহন, ০৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখ জায়দা পরিবহন এবং ১৯ আগস্ট ২০২১ ডিপজল পরিবহনে ডাকাতি করছে। সাধারণত তারা পলাশবাড়ি হতে পীরগঞ্জ মহাসড়কের নির্জন এলাকা বাস ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। ডাকাতি করার পর তারা পুনরায় আশুলিয়ায় ফিরে আসে।

Link copied!