সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আরও ৪০ হাজার একক ঘর পাচ্ছেন গৃহহীণ ভূমিহীন পরিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২২ মার্চ) ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ ৩৯ হাজার ৩৬৫টি একক গৃহ হস্তান্তর করবেন।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সারা দেশের সব উপজেলায় একযোগে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের কাছে এসব গৃহ হস্তান্তর করবেন। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি তিনটি উপজেলায় উপকারভোগীদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করবেন।”
উপজেলাগুলো হলো-গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প; সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
মুখ্য সচিব জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি ঘর প্রদান করা হয়েছে। এসব ঘরের উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ মানুষ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি।
তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯ হাজার ৬৬৫টি ঘর হস্তান্তর করা হচ্ছে। এতে করে চিহ্নিত দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি পরিবারের মধ্যে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর সম্পন্ন হচ্ছে।
মুখ্য সচিব আরও বলেন, ‘অবশিষ্ট ৪৩ হাজার ৪১০টি পরিবারের মধ্যে ২২ হাজার ১০টি পরিবার চিহ্নিত করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই শতাংশ জমিসহ একক গৃহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বাকি ২১ হাজার ৪০৪টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘দেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ বলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব জানান, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় দুই শতাংশ জমি দলিল ও নামজারি করে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর হস্তান্তর করা হচ্ছে। তারা এই জমির পুরোপুরি মালিকানা পাচ্ছেন। তবে শর্তানুসারে তারা জমি হস্তান্তর করতে বা বন্ধক দিতে পারবেন না। ভবিষ্যতে গৃহ সংস্কারের প্রয়োজন হলে মালিকানা হিসেবে তারাই সেটা করবেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট সাত লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে উল্লেখ করে মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া পরিবারপ্রতি পাঁচজন হিসেবে এ কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবার (প্রায় ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৫ জনকে)। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সমধর্মী কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে অবশিষ্ট দুই লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার।
তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪টি। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪টি হস্তান্তর হয়েছে গত বছরের ২৬ এপ্রিল এবং ২য় ধাপে ২১ জুলাই জমির মালিকানাসহ ২৬ হাজার ২২৯টি হস্তান্তর করা হয়। বুধবার চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তর হচ্ছে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর। ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়সহ মোট হস্তান্তরিত একক গৃহের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি। ৪র্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট নির্মাণাধীন গৃহের সংখ্যা ২২ হাজার ৬টি। ৪র্থ পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দকৃত বিশেষ ডিজাইনের গৃহের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৩টি এবং পার্বত্যঞ্চলের বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর ৬৩৪টি।
এখন পর্যন্ত ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল উপজেলাসহ সারা দেশের মোট ১৫৯টি উপজেলা।