অক্টোবর ১০, ২০২১, ০৯:৩৬ এএম
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে আনবিক চুল্লি (রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল) বসানোর কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরিবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উদ্বোধন করবেন তিনি।
এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল অংশ এটি। এর মাধ্যমে প্রকল্পের মাইলফলক অগ্রগতি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রি-অ্য্যাক্টর স্থাপনের পর প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আর বেশি সময় লাগবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জটিল কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। চলতি বছরেই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হবে।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এই প্রকল্পের রি-অ্যাক্টর ভবনে কংক্রিট ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে মূল কাজ শুরু হয়। এ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকে এই প্রকল্পে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক, প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। পরের বছর জুনে প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে যন্ত্রে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (পারমাণবিক জ্বালানি) বা ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তার মূল কাঠামো হচ্ছে রি-অ্যাক্টর। এটিই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাণ।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএইএ) নির্দেশনা অনুযায়ী এবং সংস্থাটির কড়া নজরদারিতেই রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
প্রথম ইউনিটের রি-অ্যাক্টর স্থাপন প্রসঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘আমরা বড় অগ্রগতিতে পৌঁছে গেছি। এই বড় অগ্রগতির মধ্য দিয়ে আমরা বলতে পারি, নির্ধারিত সময়েই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’
রাশিয়ার আর্থিক, কারিগরিসহ সার্বিক সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন (রোসাটম) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। রোসাটমের ডিজাইনে নির্মাণাধীন দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পে স্থাপন করা করা হচ্ছে রাশিয়ার উদ্ভাবিত এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের রি-অ্যাক্টর। এটি একমাত্র রাশিয়ার নভোভরোনেস পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। তাই রূপপুর প্রকল্পকে নভোভরোনেসের রেফারেন্স প্রকল্প বলা হয়।
এদিকে, রূপপুর প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়েছে রাশিয়ায়। সেখানকার বিভিন্ন কারখানায় এই যন্ত্রগুলো তৈরি করে সমুদ্র পথে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এ বছর আগস্টে দ্বিতীয় ইউনিটের রি-অ্যাক্টরও এসেছে।
স্বাধীনতার পর ৫০ বছরের মধ্যে রূপপুর প্রকল্পই দেশের সবচেয়ে বড় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সর্বাধিক ব্যয়বহুল প্রকল্প। এখানে ব্যয় হচ্ছে প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর বেশিরভাগ অর্থই সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হবে।
এ ব্যাপারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, ‘ছয়টি মূল কম্পোনেন্টের মধ্যে চারটিই স্থাপন করা হয়ে গেছে। এখন বাকি রয়েছে রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল—যেটি আজ রোববার স্থাপন করা হবে। প্রথম ইউনিটের যতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি, সবগুলো বসে যাচ্ছে।’
শৌকত আকবর আরও বলেন, ‘চলতি বছরের মধ্যে আমরা প্রকল্পের ৫০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ করব। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ করতে পারব এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাব’।