মার্চ ৩১, ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম
আজ কেউ বাদ যাচ্ছে না। আমরা শুধু বিএনপির লোকেরা নই, সাধারণ মানুষও বাদ যাচ্ছে না। নওগাঁর একজন মহিলা, তিনি সরকারি কর্মচারী। কী কারণে তাকে র্যাব তুলে নিয়ে গেল, এখন পর্যন্ত জানা যায়নি এবং তুলে নিয়ে যাওয়ার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তিনি নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করলেন, তাঁকে মেরে ফেলা হলো। র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর এই দায় সম্পূর্ণ সরকারকেই নিতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে পল্লবী ও রূপনগর থানা বিএনপি আয়োজিত এক ইফতার অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, র্যাব হেফাজতে একজন সরকারি কর্মচারীকে মেরে ফেলা হলো। এখন তারা বলছে যে, এটা ভুল হয়েছে। এক মন্ত্রী বলছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট—এটার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। এই অপপ্রয়োগের ফলে একজন নিরপরাধ অসহায় নারীর জীবন পর্যন্ত চলে গেল। এর দায় কে নেবে? এ দায় সম্পূর্ণ সরকারকে নিতে হবে।
ডিজিটাল আইনে সাংবাদিক নির্যাতন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, অ্যাক্টের আওতায় আপনারা দেখেছেন, প্রথম আলোর একজন সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে হঠাৎ করে গভীর রাতে তুলে নিয়ে গেল। এরপর ৩৬ ঘণ্টা তার কোনো খবর নেই। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে নতুন করে মামলা দায়ের করে। শুধু তাই নয়, আজ প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং এটাই শেষ নয়, এ সরকার আসার পর থেকে এ দেশের আরও তিনজন অত্যন্ত খ্যাতনামা শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, তাদের এমন অবস্থা তৈরি করেছে যে, এ দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন আমার দেশের মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের আসাদ এবং যায়যায়দিনের শফিক রেহমান। তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, জেল-জুলুম সবকিছু হয়েছে। অসংখ্য সাংবাদিক ভাইদের ওপর নির্যাতন চলছে, হত্যা হয়েছে, মেরেও ফেলা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, আজ ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। প্রতি মুহূর্তে আমাদের সেই চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে নিয়ে এগোতে হচ্ছে। সেখানে যদি আমরা শৃঙ্খলা না মানি, সেখানে যদি আমরা বিশৃঙ্খল হয়ে যাই, তাহলে সেই যুদ্ধে আমরা কি জয়লাভ করতে পারব, আমরা কি পরিবর্তন আনতে পারব, আমরা কি চাই শেখ হাসিনা সরকার চলে যাক, তাহলে রমজানের এই পবিত্র দিনে আমাদের সবাইকে শপথ নিতে হবে যে, আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব যে নির্দেশ দেবেন, সেই নির্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই মিলে সংগ্রাম করতে হবে।
পল্লবী থানা আয়োজিত এ ইফতার অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বক্তব্য দেন।
ইফতার অনুষ্ঠানে ব্যাপক নেতাকর্মীর সমাগমে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের দাঁড়ানোরও জায়গা ছিল না। সাংবাদিকরা একপাশে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালনের চেষ্টার মধ্যে কয়েকজন কর্মী বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং পরক্ষণেই মারমুখী হয়ে ওঠেন। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। পরে মঞ্চ থেকে নেতারা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যের শুরুতে এমন ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সাংবাদিক ভাইদের সাথে কয়েকজন ব্যক্তির অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত যে ঘটনা ঘটেছে, সে জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি এই রূপনগর, পল্লবী থানার নেতার্মীদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা কি সত্যিকার অর্থেই দলকে ভালোবাসেন? মনে হয় না। তাহলে আজ এ ঘটনা ঘটত না। আপনারা অতিথিদের সম্মান করতে জানেন না। আমি অত্যন্ত দুঃখিত, শোকাহত। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেই সময়ে আপনারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমি অনুরোধ করব, দয়া করে শৃঙ্খলার সঙ্গে এখানে থাকেন। আমি ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, বিএনপির নেতাদের অনুরোধ করব, আপনারা দয়া করে শৃঙ্খলাবদ্ধ হন। শৃঙ্খলা ছাড়া কোনো যুদ্ধে জয়লাভ করা যায় না, কোনো বিজয় লাভ করা যায় না।
তিনি বলেন, আমি নিজে দেখেছি, কারা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এরা কারা? এখানে আওয়ামী লীগের দালালেরা ঢুকেছে, এখানে সরকারের দালালেরা এসেছে। আমি আবারও সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে, দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।
এরপরও কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী হইচই শুরু করলে আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, এরা কারা? চুপ, থামো। কেন সাংবাদিকদের জায়গা নির্দিষ্ট করা হলো না, এ জন্য নেতাদের প্রতিও তিনি ক্ষোভ ঝাড়েন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবারও সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা নিষিদ্ধ করেনি, কিন্তু রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম তারা বন্ধ করে দিচ্ছে। বিএনপিকে তারা বাইরে কোথাও কর্মসূচি করতে দিতে চায় না। আজ যদি খোলা জায়গায় প্যান্ডেলে অনুষ্ঠান করতে পারতেন, তাহলে এত সমস্যা (ভিড়) হতো না। কিন্তু বাইরে কর্মসূচি করতে দেয় না। তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে চায়, নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়।
ফখরুল বলেন, তারা আবারও নতুন নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে যে, ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন করবে। সেই নির্বাচন আবার আগের মতো করবে। ২০১৪ সালে যেমন করেছে, ২০১৮ সালে যেমন করেছে, বিরোধী দল থাকবে না, শুধু আপনারাই থাকবেন আর আপনার পুলিশ-পাইক পেয়াদারা থাকবে যে, যেমন খুশি তেমন সিল মেরে ভোটের আগের রাতেই ফল নিয়ে যাবেন, সেটা এবার এ দেশের মানুষ হতে দেবে না।
সভায় জহিরুল হকের সভাপতিত্বে ইফতারের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আরও বক্তৃতা করেন মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ।