সক্ষমতা বেড়েছে বেনাপোল ও বুড়িমারী বন্দরের

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২১, ০৮:৪২ পিএম

সক্ষমতা বেড়েছে বেনাপোল ও বুড়িমারী বন্দরের

দেশের অন্যতম প্রধান দুই স্থলবন্দর বেনাপোল ও বুড়িমারী বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই বন্দরের উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলেই এই সুফল মিলেছে। ট্রাক প্রবেশে কম অপেক্ষার পাশাপাশি কমেছে যানজট, বেড়েছে অন্যান্য সুবিধাও। আর সে কারণেই আমদানি-রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন বিষয়ক এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট: ইমগ্রুভমেন্ট অব বেনাপোল অ্যান্ড বুড়িমারী ল্যান্ড পোর্ট’ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলেই এমন সুফল মিলছে।

মাত্র দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্প

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬৮ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধন করে কিছুটা কমিয়ে ব্যয় ধরা হয় ১৫৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে শেষ হয় প্রকল্প। প্রকল্প শেষে দেখা গেছে, সংশোধিত ব্যয় ১৫৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ধরা হলেও প্রকল্পটিতে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রকল্প চলাকালীন ও বাস্তবায়নের পর চারটি অডিট কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে দু’টির আপত্তি সম্পূর্ণরূপে নিষ্পত্তি হয়েছে। একটি অডিটের আংশিক নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি একটি অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়নি।

পণ্য সরবারহে কম লাগছে

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবাবয়নের আগে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বন্দর ও সড়কে দুই থেকে তিন ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকত। বর্তমানে এসব ট্রাক এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে, বন্দর থেকে বের হয়ে যেতে পারছে। এদিকে, দক্ষ বন্দর শ্রমিক ও সিঅ্যান্ডএফ কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য খালাস করতে আগে যেখানে তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগত, বর্তমানে তা দুই-তিন ঘণ্টায় নেমে এসেছে।

আইএমইডি’র প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর বেনাপোল বন্দরের আয় অনেকটাই বেড়েছে। প্রকল্প শুরুর আগের ২০১১-১২ অর্থবছরে এই বন্দরের আয় ছিল ২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৫৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া বুড়িমারী বন্দরের আয়ও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বন্দরের আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি বা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটার পাশাপাশি বন্দর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এছাড়া মানুষের আয় বৃদ্ধি, বন্দরের কর্মীদের দ্রুত সেবা প্রদান, আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন এমনকি দারিদ্র্য নিরসনেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে প্রকল্পটি।

প্রতিবদনে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় বেনাপোল বন্দরে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩৪ বর্গমিটার এবং বুড়িমারী বন্দরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৬ বর্গমিটার আরসিসি পেভমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বেনাপোল বন্দরে ৬ হাজার ৪০৬ বর্গমিটার ও বুড়িমারী বন্দরে সাড়ে ১৯ হাজার বর্গমিটার ট্রান্সশিপমেন্ট শেড নির্মাণের ফলে বেনাপোল বন্দরের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার মেট্রিক টন এবং বুড়িমারী বন্দরে ২ হাজার মেট্রিক টন বেড়েছে। এ কারণে বন্দর দু’টির আমদানী-রফতানি বেড়েছে। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবহারকারীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি সুফল পাচ্ছেন। আমদানি-রফতানিও আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই

প্রকল্পটি থেকে সুফল মিললেও প্রকল্পটির জন্য কিছু সুপারিশ করেছে আইএমইডি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণের পর তা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট সুবিধা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে স্থলবন্দরের ভেতরে শ্রমিকদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। সেটি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ভারতীয় শ্রমিকদের অবাধ চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় তৈরি অবকাঠামোগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে রাজস্ব বাজেট থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এছাড়া অতিবৃষ্টিতে এলাকায় যেন পানি জমে না যায়, সেজন্য ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাসায়নিক পণ্য রাখার জন্য আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ রাসায়নিক শেড নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।

Link copied!