নভেম্বর ১৬, ২০২২, ০১:০৮ এএম
বর্তমান সরকারের পতনের জন্য যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। এ জন্য গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে বিএনপি ও তাঁদের সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। একই সাথে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের পতন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও জাতীয় সরকার গঠন করে রাষ্ট্রের মেরামত নিশ্চিত করতে একমত হয়েছে বিএনপি ও তাঁদের সাত দলীয় জোট।
মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি ও সাত দলের জোটের সংলাপে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়। সংলাপে উপস্থিত নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংলাপ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে একটা জাতীয় আন্দোলন এবং ঐক্য সৃষ্টি করে একটা গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা একযোগে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলব। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ইতিমধ্যে এই কাজ শুরু হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রের যে পরিবর্তনগুলোর কথা আমরা বলেছি, সেগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করে এবং আশা করি সেগুলো নিয়েও একমত হতে পারবো। একই লক্ষ্যে আমরা এগিয়েও যেতে পারবো। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি আলোচনা হবে এবং আমাদের আলোচনা একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড উদ্যম সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে। যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে পারবো এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে পারবো।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ২২টি দলের সাথে কথা বলেছি। গণতন্ত্র মঞ্চের প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে আমরা আলাদাভাবে কথা বলেছি। আজ আমরা দ্বিতীয় ধাপে গণতন্ত্র মঞ্চের জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি।’
বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোকে পুরোপুরিভাবে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই রাষ্ট্রকে পুরোপুরিভাবে এখন মেরামত ও পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। দেশের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলগুলোকে নিয়ে আমরা প্রস্তাব করেছি যে, একটা জাতীয় সরকার গঠন করে তার মাধ্যমে সে রাষ্ট্রের যে পরিবর্তন প্রয়োজন তার সূচনা করা যেতে পারে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরও বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিও পায়নি, স্বাধীনতাও পায়নি। আজকে একটা ঐতিহাসিক দিন। সারা পৃথিবীর কাছে বার্তা যাবে যে, বাংলাদেশের জনগণ রাতের অন্ধকারে যারা ভোট চুরি করে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে তাদের সরানোর জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বৈরাচারের শুধু পতন ঘটাবে না, রাষ্ট্র মেরামত করবে, সংস্কার করবে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ যখন গঠন করেছি তখন আমাদের দুটি লক্ষ্য ছিল। এই বর্বর ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে জয় লাভ করা এবং একই সঙ্গে এই রাষ্ট্রটাকে সত্যি সত্যি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই দুটি লক্ষ্য নিয়েই আমরা আজ বিএনপির সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা সবাই একমত হয়েছি, এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করব।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা তিনটা বিষয় খুব পরিষ্কারভাবে বলছি, এই সরকারের পদত্যাগ চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও তার অধীনে নির্বাচন এবং বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার বদল চাই।’
সংলাপে বিএনপির পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন: দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন প্রমূখ।