হাফ ভাড়া : স্বাধীনতার ‍পূর্বের দাবি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২১, ২০২১, ০৪:৩২ পিএম

হাফ ভাড়া : স্বাধীনতার ‍পূর্বের দাবি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি

শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া দাবি দীর্ঘদিনের। কয়েকদফা আন্দোলন করলেও দেশ স্বাধীন হবার ৫০ বছরে এই দাবি বাস্তবায়ন করেনি কোন সরকার। ফলে স্বাধীনতার পূর্বে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে এখনো। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হাত ধরে আসে ১১ দফা দাবিতে ছিল হাফ ভাড়া প্রসঙ্গ। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও এই দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বদরুন্নেসার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখতে ক্লিক করুন

১১ দফা দাবিতেই ছিল হাফ ভাড়া

১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হাত ধরে আসে ১১ দফা দাবি। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (রাশেদ খান মেনন), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (বেগম মতিয়া চৌধুরী), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) আটজন ছাত্রনেতা সম্মিলিতভাবে গঠন করেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ঘোষিত এ ১১ দফা দাবির একটি ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া রাখা। দাবির ১ (ঢ) দফা অনুসারে, ‘ট্রেনে, স্টিমারে ও লঞ্চে ছাত্রদের “আইডেন্টিটি কার্ড” দেখাইয়া শতকরা পঞ্চাশ ভাগ “কন্সেসনে” (ছাড়ে) টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা করিতে হইবে। মাসিক টিকিটেও “কন্সেসন” দিতে হইবে।’

বাসভাড়া সম্পর্কে ধারাটিতে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের মতো বাসে ১০ পয়সা ভাড়ায় শহরের যেকোনো স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা করিতে হইবে। দূরবর্তী অঞ্চলে বাস যাতায়াতেও শতকরা ৫০ ভাগ “কন্সেসন” (ছাড়) দিতে হইবে। ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করিতে হইবে। সরকারি ও আধা সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের শতকরা ৫০ ভাগ “কন্সেসন” দিতে হইবে।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও ছিল হাফ ভাড়ার দাবি

সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় আন্দোলনগুলোর একটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন—২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবি। তখন ঢাকা অবরোধ করা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির ভেতরে অন্যতম ছিল, ‘শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের নয় দিন ধরে চলা ২০১৮ সালের আন্দোলনের পর প্রণয়ন হয় সড়ক পরিবহন আইন। কিন্তু সেখানেও ৯ দফা একটি অর্ধেক ভাড়াসংক্রান্ত দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে।

চলতি বছরে নভেম্বরের শুরুতে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে অঘোষিত ধর্মঘট পালন শুরু করেন বাস, ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকেরা। বাসভাড়া নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বৈঠক করে পরিবহনমালিকদের সঙ্গে ৭ নভেম্বর। নতুন বর্ধিত ভাড়াও নির্ধারিত হয়। সেখানেও শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছে বিআরটিএ সূত্র।

মৌখিক নির্দেশনাতেই সীমাবদ্ধ

হাফ ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে দেশে প্রথম আশির দশকে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসে। কিন্তু সেটা মৌখিক নির্দেশনাতেই সীমাবদ্ধ। এরপর কয়েক দফা বিচ্ছিন্ন ভাবে আন্দোলন হলেও কোন সরকারই শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া আদায় নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। 

যদিও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন কয়েকবার। সর্বশেষ ২০১৫ সালের অক্টোবরে বিআরটিসির কার্যালয়ে বাস ডিপো ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে এক বৈঠকে আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, ‘আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, রাজধানীতে চলাচলরত বিআরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবে। আর না নিলে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নির্দেশনার পর ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিয়ে পরিবহনমালিকদের কোনো আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাংসদ মশিউর রহমান রাঙা বলেন, ওবায়দুল কাদেররের এমন কথার পর আমাদের সঙ্গে তার এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিআরটিসি অর্ধেক ভাড়া চালু করতে পারে।

পরিবহনমালিকেরা কোনো উদ্যোগ নিবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘এটা সরকারের বিষয়। আমাদের নয়। আমাদের না বললে যেঁচে গিয়ে সরকারের সঙ্গে বসব না। সরকার বলুক।’

যাত্রীদের অধিকার কাজ করা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, উন্নত অনেক দেশেই ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া রাখা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে এটা নিয়ে ঝগড়া একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। হাফ পাশ দেওয়া হোক বা না হোক—তা একটা সিস্টেমে আনতে হবে।

ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, সরকার এটা (অর্ধেক ভাড়া) দিতে পারে। মালিক কেন দেবেন? স্কুল কর্তৃপক্ষও দিতে পারে। এটা নিয়ে ঝগড়ার কোনো কারণ নেই। কারা ভর্তুকি দেবে, সেটা তাঁরা জানেন।

Link copied!