পবিত্র ঈদ উল আজহা উদযাপন শেষ হওয়ার পর আসছে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত সারাদেশে আবারও কঠোর লকডাউন চলবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
শনিবার(১৭ জুলাই) দুপুরে চুয়াডাঙ্গায় ৬ বিজিবি’র (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ৯৬তম রিক্রুপমেন্ট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে দেয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোরবানিতে আমাদের বিশাল এক অর্থনীতি রয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার মানুষের চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। তবে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যতদিন পর্যন্ত সবাইকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।’
মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল হলেও এতদিন পিছিয়ে ছিল মন্তব্য করে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ জেলাগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়ায় আজকে প্রত্যেকটি জেলা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠেছে।’
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের অতিমাত্রার সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত শিথিল করে গত ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। একই প্রজ্ঞাপনে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনষেধ আরোপ করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনষেধ বাস্তবায়ন করতে মোট ২৩টি বিধিনিষেধ মানার বিষয়ে বলা হয়েছে।
কঠোর লকডাউনে ২৩টি বিধিনিষেধ:
১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে;
২.সড়ক, নৌ ও রেলপথে গণপরিবহণ (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে;
৩. শপিংমল/ মার্কিটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে;
৪. সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে;
৫. সকল প্রকার শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে;
৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরণের সামাজিক (বিবাহত্তোর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে;
৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে;
৮. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে;
৯. সরকারি কর্মচারিগণ নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি ( ই-নথি, ই-টেন্ডিারিং, ই-মেইল, SMS, WhatsApp-সহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন;
১০. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ,কীটনাশক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমুহের কর্মচারি ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে;
১১. বিভাগীয় জেলা উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভঅগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে;
১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/ নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে;
১৩.বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে;
১৪. কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯:০০ টা থেকে বিকাল ৩:০০ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে;
১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে;
১৬. টিকা কার্ড প্রদান সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে;
১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরা সকাল ৮:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয়(Online/Take away) করতে পারবে;
১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন;
১৯. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে;
২০. ‘ আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন;
২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি,পুলিশ,র্যাব ও অনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রযোজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে;
২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং
২৩. সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।