মার্চ ৩০, ২০২২, ০৭:০৭ এএম
ফ্ল্যাটে নিহত তানিয়া আফরোজের ঘাতকরা তার এক শিশুকন্যাকেও হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। ওই ঘাতকরা তানিয়ার বাসায় এসেছিল এসি সার্ভিসিংয়ের মেকানিক হিসেবে। এরা হলেন বাপ্পী ও তার দুই সহযোগী সুমন হোসেন হৃদয় এবং রুবেল। তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে স্বীকারও করেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে পল্টন মডেল থানায় সবুজবাগে তানিয়া হত্যাকাণ্ডে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ।
রাজধানীর সবুজবাগ থানার দক্ষিণগাঁও বেগুনবাড়ি মাস্টার গলির চারতলা ভবনের দোতলার ফ্ল্যাটে খুন হন তানিয়া আফরোজ। তানিয়ার মরদেহ উদ্ধারের সময় নিহতের তিন বছর বয়সী মেয়ে এবং ১০ মাসের ছেলেকে রক্তমাখা অবস্থায় পাওয়া যায় সেখানে।
বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করলে ব্যাগে থাকা স্কচটেপ বের করে তাদের মুখে পেঁচিয়ে দেয়, স্কচটেপ দিয়ে হাতও বেঁধে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে তিন বছরের মায়মুনা বেশি কান্নাকাটি করলে তাকেও হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বাপ্পী তিন বছরের মেয়েটিকেও কোপাতে চায়। তখন হৃদয় তাকে আটকায়। এরপর হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শিশুটিকে বাথরুমে ঢুকিয়ে রাখে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি আহাদ জানান, এসি টেকনিশিয়ান বাপ্পীকে সোমবার ঝালকাঠির নলছিটির গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ঢাকার রামপুরা এলাকা থেকে হৃদয় ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনার দিন এসি মেকানিক বাপ্পী সহযোগী হৃদয়কে নিয়ে ওই বাসায় আসেন। তারা এসে এসি সার্ভিসিং করতে হবে কি না জানতে চাইলে, তানিয়া তার স্বামী ময়নুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। ময়নুল বাসায় ছিলেন না বলে তাদের পরে আসতে বলেন।
ডিসি বলেন, তানিয়া পরে আবার স্বামীর সঙ্গে কথা বলে এসি মেকানিকদের কাজ করার জন্য দরজা খুলে দেন। পরে বাপ্পী, হৃদয় ও রুবেল বাসায় প্রবেশ করেন। তারা এসির কাজ শুরু করলে, তানিয়া বাসার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তানিয়া হঠাৎ বেডরুমে গিয়ে দেখেন, তারা বাসার আলমারি খুলে জিনিসপত্র ওলটপালট করছে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে রুবেল প্রথমে তাকে বালিশচাপা দেন এবং বাপ্পী চাপাতি বের করে তার মাথায় ও পিঠে ৩টি কোপ দেন। পরে তারা ২ শিশুকে বেঁধে রেখে লুটপাট করে।
মতিঝিল বিভাগের ডিসি আ. আহাদ বলেন, মরদেহ উদ্ধারের সময় নিহতের তিন বছর বয়সী মেয়ে এবং ১০ মাসের ছেলেকে রক্তমাখা অবস্থায় পাওয়া যায় সেখানে। তানিয়ার স্বামী মাইনুল ইসলাম ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরির কারণে সেখানে অবস্থান করছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করলে ব্যাগে থাকা স্কচটেপ বের করে তাদের মুখে পেঁচিয়ে দেয়, স্কচটেপ দিয়ে হাতও বেঁধে দেয়া হয়। এরই মধ্যে তিন বছরের মায়মুনা বেশি কান্নাকাটি করলে তাকেও হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বাপ্পী তিন বছরের মেয়েটিকেও কোপাতে চায়। তখন হৃদয় তাকে আটকায়। এরপর হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শিশুটিকে বাথরুমে ঢুকিয়ে রাখে তারা।
ডিসি আহাদ বলেন, খুনিরা যখন লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড শেষ করে চলে যায়, তখনও বাসার চুলা জ্বলছিল। সে সময় তিন বছরের শিশুটি বাথরুমের দরজা খোলা পেয়ে বেরিয়ে আসে। হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় পাশের বাসায় গিয়ে কনুই দিয়ে সে দরজায় নক করে। ওই বাসার নারী দরজা খুলে শিশুটি বলে, মাকে মারছে। পুলিশ লুটপাট করা মালামাল ও ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।