বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া কিংবা প্রচুর রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছাতার বিকল্প নেই। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে শতবর্ষেরও বেশি সময় আগে এ দেশে ছাতা উৎপাদন শুরু হয়। ক্রমে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হতে থাকে। সাম্প্রতিককালে চীনা পণ্যের আগ্রাসী বাণিজ্যের কারণে বাংলাদেশে ছাতা উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
দেশীয় ছাতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ১২৫ টি
আলম অ্যান্ড কোম্পানি, শরীফ ছাতা, আলাউদ্দিন ছাতার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ১০০ বছর ধরে চকবাজারে ছাতার ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এগুলোর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে যোগ হয় হাকিম ছাতা, নওয়াব, সানোয়ার, তাজউদ্দিন, এটলাস ও আফসার ছাতা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানও।
বর্তমানে চকবাজার, চকমোগলটুলি ও মৌলভীবাজারে প্রায় ১২৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ছাতা ও এর সরঞ্জাম তৈরির। অধিকাংশ দোকানের সঙ্গেই আছে ছোট ওয়ার্কশপ যেখানে বিভিন্ন সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়। পুরান ঢাকার ৪টি কারাখানায় তৈরি হয় ছাতার ধাতব শিক। কাপড় সংগ্রহ করা হয় ইসলামপুর ও শ্যামপুর থেকে। কাপড়ের মানের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে ছাতার দাম।
বিভিন্ন মান ও আকারের ছাতা পাওয়া যাচ্ছে
পলিয়েস্টার, ট্যাট্রন ও সুতির মধ্যে সর্বশেষটিই সবচেয়ে উন্নতমানের বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় বর্তমানে পলিয়েস্টার বেশ চলছে, বলেন তারা। ছাতার কাপড়, শিক ও হাতল এই তিন সরঞ্জামের জোগান থাকলে একটি ছাতা তৈরি করতে একজন কারিগরের ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে।
এখানে পাওয়া যাবে বিভিন্ন মান ও আকারের ছাতা। ১২ থেকে ৪২ ইঞ্চি পর্যন্ত ছাতা পাওয়া যায় এখানে। তবে সাধারণত ২২ থেকে ২৬ ইঞ্চির ছাতা সচারচর ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ ছাতার বাহিরেও গার্ডেন আব্রেলা পাওয়া যায় এখানে।
বর্ষা মৌসুমেই বিক্রি বেশি
বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ ছাতা বিক্রি হয়। সে হিসেবে চকবাজারে তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। বাকি সময়ে লোহার শিক ও কাপড় বিক্রির মাধ্যমেই ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা লাগে।
মোশারফ ছাতার ব্যবস্থাপক মো. রাসেল শেখ বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা চকবাজার থেকে ছাতা কিনে থাকেন। তিনি জানান, ভাঁজহীন দেশি ছাতা ১৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি-বিদেশি দুই ভাঁজের ছাতা ২৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং তিন ভাঁজের বিদেশি ছাতা ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, চিন ও ভারতীয় ছাতার আগ্রাসনের কারনে দেশীয় ছাতা শিল্প বিকশিত হতে পারছে না। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনের জন্য ছাতা অর্ডার দেয় সেগুলোর উপড় নির্ভর করেই শিল্পটি ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে।